
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এ উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য ২০২৪ সালে ‘ভাটনগর পুরস্কার’ পেয়েছেন প্রফেসর উর্বশী সিংহ। এর আগেই অবশ্য নানা পুরস্কারে ভূষিত তিনি। ২০১৮ সালে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীদের মধ্যে উর্বশী সিংহ ছিলেন একজন। তিনি লাভ করেছেন চন্দ্রশেখরেন্দ্র সরস্বতী ন্যাশনাল এমিনেন্স অ্যাওয়ার্ড, রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পুরস্কার। পেয়েছেন গেটস কেমব্রিজ ইমপ্যাক্ট পুরস্কার। এই পুরস্কারের জন্য তাঁর মনোনয়ন-পত্রে বলা হয়েছে, “অধ্যাপক সিংহর দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাঁর অবদান, ভবিষ্যতে মানব প্রজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের পথ প্রশস্ত করছে, যেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ইতিবাচক অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে। বিশ্বব্যাপী অগ্রগতির জন্য বৈজ্ঞানিক চেতনাকে আরও স্পষ্ট করে তুলবে।” তাঁর গবেষণার ইতিহাসটি দীর্ঘ। কেমব্রিজে ন্যাচরাল সায়েন্স ট্রাইপোসের একটি পরীক্ষাভিত্তিক প্রজেক্টের সূত্র ধরে প্রফেসর উর্বশী সিংহর পরিচয় ঘটে ‘জোসেফসন ক্রিয়ার’ সাথে। ‘জোসেফসন ক্রিয়া’ বলতে দুটি অতিপরিবাহী উপাদানের মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহকে বোঝায়, যে-প্রবাহকে একটি পাতলা অন্তরক উপাদানের স্তর দ্বারা পৃথক করা হয়। কেমব্রিজের ন্যানোসায়েন্স সেন্টারে কাজ করা প্রথম পিএইচ ডি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উর্বশী একজন। এর পর, তিনি ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে, কাগজকে আরও পাতলা এবং সাদা কীভাবে করা যায় তাই নিয়ে গবেষণা করেন। ২০০৭ সালে কানাডায় ওয়াটারলু কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিশ্ববিদ্যালয়ে একক এবং এনট্যাঙ্গল ফোটন সম্পর্কিত কাজ আরম্ভ করেন। ২০১২ সালে, বেঙ্গালুরুর রামন গবেষণা ইনস্টিটিউটে তিনি স্থাপন করেন কোয়ান্টাম ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্পিউটিং (QuIC) গবেষণাগার। কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম অপটিক্স, এবং কোয়ান্টাম ফান্ডামেন্টালস এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য হেরাল্ডেড এবং এন্ট্যাঙ্গলড ফোটন সোর্স তৈরি এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে QuIC এ দেশের প্রথম ল্যাবগুলির মধ্যে একটি। গ্লোবাল ড্রাইভের অংশ হিসাবে ডেটা সুরক্ষায় এনক্রিপশনের জন্য ‘কুইটবিট’ তৈরি করা, বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি কাজ। তাঁর তৈরি করা গবেষণার নতুন হাতিয়ারকে কাজে লাগিয়ে ইসিজিতে খুঁটিনাটি বিবরণ সহ আরও স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব হবে। কেবল ভারতেই নয়, উর্বশী বিশ্বব্যাপী কোয়ান্টাম বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে ধারাবাহিকভাবে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে, গুরুত্বপূর্ণ ফল দেখিয়েছেন। (১) মৌলিক কোয়ান্টাম বিজ্ঞান, (২) নীতিনির্ধারণ এবং (৩) তার ব্যবহারিক প্রয়োগ। কোয়ান্টাম প্রযুক্তি দ্বারা কেবল ‘ঝুঁকি চিহ্নিত’ করাই নয় বরং ‘বহু-সম্ভাবনাময় সুযোগের সদ্ব্যবহার’ কিভাবে করা যায়, সে বিষয়ে বহুক্ষেত্রে, পথ-প্রদর্শক তাঁর কাজ। একটি উদাহরণ হল, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ব্যবহার করে, ‘কার্বন-শোষক উপাদানগুলিকে’ আরও ভিন্ন উপায়ে কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তার পথ দেখানো। তিনি ওপেন কোয়ান্টাম ইনস্টিটিউট স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন। সকল কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির প্রোগ্রামাররা যাতে ওপেন কোয়ান্টাম প্রশিক্ষণ পেতে পারেন, তার জন্য তিনি ক্রমান্বয়ে সাহায্য করে চলেছেন।
সূত্রঃ Gates Cambridge, 16.1.25