আমাদের অন্ত্রে যা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে তা প্রায়শই আমাদের শরীরের বাকি অংশে আশ্চর্যজনক প্রভাব ফেলে। এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর বা স্ট্রোকের মতো বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার ইভেন্টের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত ঝুঁকির কারণ। বিশ্লেষণটি ইউনাইটেড কিংডম বায়োব্যাঙ্কের ৪ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তির স্বাস্থ্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত এই গবেষণা অনুসারে, যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দুই থেকে তিন গুণ বেশি। উচ্চ রক্তচাপ শুধুমাত্র বিপদ বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করেন গবেষকরা। বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে সব ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য উভয়ই রয়েছে তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪% বেশি। মোনাশের গবেষকদের মতে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং ধূমপান দীর্ঘকাল ধরে হৃদরোগের মূল কারণ হিসাবে স্বীকৃত। তবে, এই কারণগুলোই একমাত্র কারণ নয়। এই গবেষণায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাব্য ভূমিকাকে একটি অতিরিক্ত ঝুঁকির কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাব্য বিপজ্জনক পরিণতির সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হল এলভিস প্রিসলি। ১৯৭৭ সালে এলভিসের বয়স যখন ৪২ বছর তখন হার্ট অ্যাটাকের ফলে তিনি মারা যান। বলা হয় যে এর অন্যতম কারণ হল দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য। যদিও এলভিসের মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরা, তবে ‘খারাপ’ হার্ট ও তার সঙ্গে ড্রাগের অপব্যবহার সম্ভবত একটি বড়ো ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এও সত্য যে তিনি দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছিলেন আর তার প্রধান কারণ হল খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার। তার ময়নাতদন্ত থেকে জানা যায় তার মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে থেকে তার অন্ত্রে মাটির মতো মল আটকে ছিল। এলভিসের ব্যক্তিগত ডাক্তার সহ কিছু বিশেষজ্ঞের অনুমান কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পেটে চাপ দিয়ে মলত্যাগের সময় তার রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়। গবেষকদের অনুমান কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল হৃদযন্ত্রের রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেনেটিক সম্পর্ক রয়েছে। শোনা যায় এলভিসের কন্যা, লিসা মেরি প্রিসলি, ৫৪ বছর বয়সে বৃহদান্ত্রের আংশিক বা সম্পূর্ণ ব্লকেজের কারণে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
পরিপাকতন্ত্রের সবচেয়ে সাধারণ ব্যাধিগুলোর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম। এটি বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১৪%-কে প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে একজন ব্যক্তির মলত্যাগের সময় তার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত। তবে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।