ক্রান্তীয় অঞ্চলের বন মাত্র কয়েক ধরনের গাছ দিয়েই গঠিত

ক্রান্তীয় অঞ্চলের বন মাত্র কয়েক ধরনের গাছ দিয়েই গঠিত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ১৯ জানুয়ারী, ২০২৪

ক্রান্তীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চলের বনভূমি বিভিন্ন ধরনের গাছপালার বৈচিত্র্য ও নানা ধরনের ইকো সিস্টেমের জন্য পরিচিত। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, সব বনভূমিতেই বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে থাকে কয়েক ধরনের সাধারণ গাছপালা আর বাকি কিছু অঞ্চলে কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ থাকে। আফ্রিকা, আমাজন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে ১৫৬৮টি স্থানের এক মিলিয়নেরও বেশি গাছপালার ওপর সমীক্ষায় তারা দেখেছেন মোটে ২.২% গাছের প্রজাতি দিয়ে ৫০% বনাঞ্চল গঠিত হয়েছে,বনভূমির বাকি ৫০%-এ অন্যান্য কিছু গাছ ও নানা ধরনের বিরল গাছপালা থাকে। প্রতিটি মহাদেশ আর একটি বিষয় দেখা গেছে যে এই সাধারণ প্রজাতি এবং বিরল প্রজাতির গাছের অনুপাত একই থাকছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান ক্রান্তীয় বনভূমির ৮০০ বিলিয়ন গাছের অর্ধেক গাছই মাত্র ১০৫৩ প্রজাতির গাছ দিয়ে তৈরি। আর ৮০০ বিলিয়নের বাকি অর্ধেক গাছপালা ৪৬০০০ গাছের প্রজাতি নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে আবার ৩৯৫০০ টা প্রজাতির গাছ বেশ বিরল যারা মোট গাছের মধ্যে মাত্র ১০% স্থান অধিকার করে। আমাজন নদীর সংযুক্ত বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে আমাজান বন গঠিত, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশিরভাগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে বনাঞ্চল। মাত্র ২০০০০ বছর আগে মানুষ আমাজনে এসেছিল, কিন্তু আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনে তার দ্বিগুণেরও বেশি সময় ধরে মানুষ বসবাস করছে। এই পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, গাছপালার ক্ষেত্রে কিন্তু বৈচিত্র্যেগুলো প্রায় সদৃশ। এর থেকে মনে করা হয় যে একটি মৌলিক প্রক্রিয়া বিশ্বের সমস্ত গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন জুড়ে উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের সমাবেশকে পরিচালনা করছে। যদিও এই মৌলিক প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীরা এখনও বুঝতে পারেননি।
গবেষকদের মতে সবচেয়ে সাধারণ গাছের প্রজাতি বোঝার দিকে মনোনিবেশ করলে বর্তমান পরিবেশগত পরিবর্তনে সমগ্র বন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা বুঝতে সুবিধা হবে। এটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কারণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত কার্বন থাকে যা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কার্বন সিঙ্ক। এছাড়া সাধারণ গাছের প্রজাতি ট্র্যাক করে এই বনগুলির বৈশিষ্ট্য জানা যেতে পারে যা থেকে ভবিষ্যতে সহজে একটা বনের গাছপালার অবস্থা বোঝা সম্ভব হবে। গবেষকরা জানিয়েছেন প্রায় কিছুই জানা যায় না এমন হাজার হাজার গাছের প্রজাতির পরিবর্তে প্রতিটি মহাদেশে কয়েকশ সাধারণ গাছের প্রজাতির উপর নজর দিলে এই বনাঞ্চল সম্পর্কে বোঝা যাবে। তবে বিরল প্রজাতির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।এই বিরল প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন, তবে এই সব বনের গাছ সম্পর্কে দ্রুত, গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সাধারণ গাছের প্রজাতির উপর বৈজ্ঞানিকভাবে মনোযোগ দিলে আসবে।