১৯২৯ সালে অস্ট্রিয়ার পুরাতত্ত্ববিদ জোসেফ কেইল এবং তাঁরা সহকর্মীরা তুরস্কর এফেসুস নামক স্থানের ধ্বংসাবশেষ থেকে একটি জলভরা খুলি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল এটি কোনো অভিজাত বংশীয় যুবতীর, যার বয়স আন্দাজ কুড়ি। কিন্তু তিনি এই অনুমানের সপক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ দেননি। সেই থেকে এটি কার খুলি তা নিয়ে নানারকম জল্পনা চলেছে। অনেকে বললেন, ওটি ক্লিওপেট্রার বোন চতুর্থ আর্সিনোয়ে-র। ১৯৫৩ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান জোসেফ ভেনিংগার এটির আলোকচিত্র সমেত মাপজোক প্রকাশ করেন। তাঁর মতেও ওই খুলিটি একটি অভিজাত বংশীয় পরিশীলিত তরুণীর। ১৯৮২ সালে পুনরায় খননকার্য চালিয়ে কঙ্কালটির বাকি অংশ উদ্ধার করা হয়। ১৯৯০ সালে কথা উঠল, খুলিটি আর্সিনোয়ে-র। কারণ ক্লিওপেট্রার প্রেমিক মার্ক অ্যান্টনির প্ররোচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৪১-এ আর্সিনোয়ে-কে এফেসুস-এই খুন করা হয়েছিল। সেই থেকে অজস্র লেখালিখি, গবেষণা চলছে এই গুজবটিকে ঘিরে। ইদানীং কালে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সম্মিলনে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগ করে নতুন করে গবেষণা শুরু হয়। প্রথমত খুলিটিকে মাইক্রো কম্পিউটেড টোমোগ্রাফির আশ্রয় নিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে ৮০ মাইক্রোমিটার রেজোলিউশনের একটি ডিজিটাল ছবি তোলা হয়। তারপর খুলির নিম্নভাগ আর কানের ভিতরভাগ থেকে ছোটো ছোটো নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে খুলি-মালিকের বয়স আর জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা হয়। এবার মাস স্পেক্ট্রোমিটার থেকে উপাত্ত (ডেটা) নিয়ে সেটাকে তুলনা করা হয় আধুনিকতম ক্যালিব্রেশন বক্ররেখা সঙ্গে। তা থেকে মানুষটির অনুমিত খাদ্যাভ্যাসেরও বিচার করা সম্ভব হল। সব মিলিয়ে বোঝা গেল, খুলিটি খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩৬ থেকে ২৪৫-এর মধ্যবর্তী কোনো একটা সময়ের। অর্থাৎ ক্লিওপেট্রার বোনের যুগের সঙ্গে এর ভালোই মিল আছে। কিন্তু তার পরেই চমক। দেখা গেল, ওটির মধ্যে রয়েছে ওয়াই-ক্রোমোসোম। অর্থাৎ খুলিটি নারীর নয়, পুরুষের। আরও নিবিষ্ট গবেষণা থেকে জানা গেল ওটি আসলে ১১-১৪ বছর বয়সের একটি বাচ্ছা ছেলের। দাঁতের গঠন আর অপরিণত খুলির আকার দেখে এটা বোঝা গেল। আবার এ-ও বোঝা গেল যে ছেলেটির কোনো গঠনগত বিকৃতি ছিল। কারণ ওই খুলির ফাটলগুলির চেহারা ৬৫ বছর বয়সের বৃদ্ধের মতো। এই কারণে খুলিটার গড়নও একটু বিষম। তাছাড়া ওর চোয়ালটাও ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি, একটু কোণাচে হয়ে ছিল। তার মানে ছেলেটি ভালোভাবে চিবোতে পারত না। দাঁতের গড়ন থেকেও সেটার প্রমাণ মিলল। সুতরাং অবশেষে এতদিকার রহস্যের সুনির্দিষ্ট সমাধান মিলল। খুলিটি আদপেই ক্লিওপেট্রার বোন আর্সিনোয়ে-র নয়। জিনোম বিশ্লেষণ থাকে জানা গেছে, ওটি সম্ভবত সার্ডিনিয়া কিংবা ইতালির একটি রোমান কিশোরের। তবে সবচেয়ে বড়ো কথা, এই নতুন গবেষণা-পদ্ধতির দৌলতে এই ধরণের আরও অনেক গবেষণার পথ খুলে গেল। সম্প্রতি সায়েন্টিফিক রিপোর্ট্স পত্রিকায় এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র Gerhard W. Weber, Petra G. Šimková, Daniel M. Fernandes, Olivia Cheronet, Előd Úry, Harald Wilfing, Katarina Matiasek, Alejandro Llano-Lizcano, Pere Gelabert, Immo Trinks, Katerina Douka, Sabine Ladstätter, Tom Higham, Martin Steskal, Ron Pinhasi. The cranium from the Octagon in Ephesos. Scientific Reports, 2025; 15 (1) DOI: 10.1038/s41598-024-83870-x