অনেক সময় ধাক্কা লাগার পরে, আমাদের ক্ষত হয়ে কালশিটে পড়ে। কিন্তু কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই যদি আমাদের কালশিটে পড়ে? প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ সহজে কালশিটে পড়ার কথা বলেন। তারা উদ্বিগ্ন হয়ে হেমাটোলজিস্ট-এর (রক্তের ডাক্তার) কাছে প্রায়শই পরামর্শ চান।
আমাদের রক্তনালীগুলির মধ্য দিয়ে তরল রক্ত প্রবাহিত হয়, লাল রক্ত কণিকা অক্সিজেন বহন করে, আমাদের মস্তিষ্ক, পেশী এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। রক্তে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা রয়েছে যা আহত হলে রক্তপাত থেকে রক্ষা করার জন্য রক্ত জমাট বাঁধায়, আবার একই সাথে বিপজ্জনক রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে। যদি একটি রক্তনালী জখম হয় তবে রক্ত দ্রুত ঘন হয়ে জেলির মতো জমাট বাঁধতে পারে, যা রক্তনালীটি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত রক্তের ক্ষয় কমাতে পারে। রক্তে সঞ্চালিত অনুচক্রিকা ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালী প্রাচীরের সাথে আবদ্ধ হয়। ডাক্তাররা সাধারণত কালশিটে পড়লে ব্যক্তির রক্তপাত সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে সতর্ক করেন, যেমন বড়ো কালশিটের সাথে ঘন ঘন নাক দিয়ে রক্তপাত, ঋতুকালীন সময়ে প্রচুর রক্তপাত, দাঁতের অস্ত্রোপচার, সাধারণ অস্ত্রোপচার বা প্রসবের পরে রক্তপাতের সমস্যা, হাড়ের সংযোগে বা মস্তিষ্কে গুরুতর রক্তপাত।
সহজে কালশিটে পড়ে এমন ব্যক্তির জন্য প্রথমে সম্পূর্ণ রক্তের গণনা করা হয়। এতে অনুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিক কিনা তা দেখতে হবে। অনুচক্রিকা বিভিন্ন কারণে হ্রাস পেতে পারে, অস্থি মজ্জাতে যথাযথভাবে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্পাদিত না হলে, বা খুব দ্রুত রক্ত সঞ্চালন থেকে সরে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপিউরা নামে পরিচিত রোগ হয়ে থাকে। শিশুদের মধ্যে, এটি সাধারণত একটি স্বল্পমেয়াদী অবস্থা যা নিজে থেকেই সেরে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ওষুধের মাধ্যমে চিকিত্সার প্রয়োজন হতে পারে যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমন করে বা অনুচক্রিকা উত্পাদন বাড়ায়। কখনও কখনও প্রাপ্তবয়স্কদের প্লীহা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। গুরুতর ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলেও কালশিটে পড়তে পারে মাড়ি থেকে রক্তপাত বা স্কার্ভি হতে পারে, আবার বেশ কিছু রোগের কারণে রক্তনালী পাতলা হয়ে যেতে পারে বা প্রদাহ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হেনোক-শোনলেইন পারপিউরা, যা একটি অটোইমিউন অবস্থা যার ফলে পা এবং উরুতে কালশিটে পড়ে। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের চামড়া এবং রক্তনালী পাতলা হয়ে যায়, যার ফলে কালশিটে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
নানা শারীরিক রোগে সহজে কালশিটে পড়তে পারে, কিন্তু অন্য ধরনের অত্যধিক রক্তপাতের ঘটনা না ঘটলে, রক্তের গণনার মাপ ঠিক থাকলে এবং রক্তজমাট বাঁধার পরীক্ষা স্বাভাবিক থাকলে এ নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।