দক্ষিণ ইতালির সিসিলি প্রদেশের পালেরমো শহর। এই শহরেই রয়েছে আস্ত একটি ক্যাটাকম্ব, অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র। সেখানে থরে থরে সাজানো মমি। আর এদের সঙ্গে এই গুহাতেই বাস এক জীবন্ত মমিরও!
এই জীবন্ত মমি মিটি মিটি চেয়ে থাকে দর্শকদের দিকে। কখনও চোখ বন্ধ করে ঘুমোয়, আবার কখনও চোখ খুলে দেখে নেয় কারা দেখতে এসেছেন তাকে!
এই মমি তৈরি হয়েছিল ১৯২০-তে। ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া নামের এক মারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দু’বছরের শিশু রোজালিয়া লম্বার্ডো। রোজালিয়ার বাবা মারিও আগে তার দুই সন্তানকে অকালে হারিয়ে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন রোজালিয়া বেঁচে না থাকলেও ওর দেহ যেভাবে হোক বাঁচিয়ে রাখবেন। তাই রোজালিয়ার দেহকে মমি করে রাখা। সেই কাজ করতে ডেকে এনেছিলেন সিসিলি তথা ইতালির সুপরিচিত ফার্মাসিস্ট ও দেহ-সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অ্যালফ্রেডো সালাফিয়ার। সালাফিয়ার হাতের জাদুতেই জীবন্ত হয়ে উঠেছিল রোজালিয়ার মৃতদেহ। তাঁর মমিকরনের কৌশলেই যেন প্রাণ ফিরে আসে রোজালিয়ার চোখে। তার চোখের পাতা কখনো খুলছে, কখনও বন্ধ হচ্ছে।
এমন বিস্ময়কর ঘটনায় অবাক হয়েছিলেন স্বয়ং মারিও-ও। তাঁর ডায়েরিতেও উল্লেখ পাওয়া যায় এই ঘটনার। এর প্রায় আরও ৯০ বছর পর সমাধান মেলে সেই রহস্যের। নেপথ্যে ইতালির জৈবিক নৃবিজ্ঞানী দারিও পিওম্বিনো মাস্কালি। মাস্কালি আবিষ্কার করেন, আদতে চোখের পাতা খোলা বা বন্ধ হচ্ছে না রোজালিয়ার। মমিকরনের সময় ইচ্ছাকৃতভাবেই সালাফিয়ার আধবোজা করে রেখেছিলেন রোজালিয়ার চোখের পাতা। তার ওপরে প্রলেপ দিয়েছিলেন ইথারে দ্রবীভূত প্যারাফিন এবং রেজিনের। যা কাজ করে অনেকটা লেন্সের মতোই। তাই বিভিন্ন কোণ থেকে কখনও চোখ খোলা মনে হয়, কখনও আবার বন্ধ। আদতে তা একটি অপটিক্যাল ইলিউশন। ২০০৯ সালে এই রহস্যের যবনিকা পতন হলেও, রোজালিয়ার মমি আজও পরিচিত ‘ক্যাপুচিন ক্যাটাকম্বের জীবন্ত মমি’ নামেই।