
গাঁজা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে,পণ্য হিসেবে বিক্রীত উচ্চমাত্রার টিএইচসি (ডেল্টা-৯-টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল) সমৃদ্ধ গাঁজা কি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক? ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো আনশুটজ মেডিকেল ক্যাম্পাসের গবেষকরা আন্তর্জাতিক সহযোগীদের নিয়ে এই বিশ্লেষণ করেছেন। ফলাফল ছাপা হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ পত্রিকা এনালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে। ১৯৭৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে কৃত ৯৯টি গবেষণা ও ২,২১,০৯৭ জন অংশগ্রহণকারীর তথ্য ঘেঁটে তৈরি হয়েছে এই পর্যালোচনা।
গবেষকরা বলছেন, ৫ মিলিগ্রামের বেশি টি এইচ সি বা প্রতি ডোজে ১০%–এর বেশি টি এইচ সি থাকলেই সেটিকে ‘অতি ঘন’ ধরা হয়েছে। আবার অন্য কতকগুলি পণ্যকেও এর আওতায় আনা হয়েছে। এই পর্যালোচনায় নজর দেওয়া হয়েছে উদ্বেগ , বিষণ্ণতা , সাইকোসিস, স্কিজোফ্রেনিয়া, গাঁজা ঘটিত বৈকল্য এবং অন্যান্য পদার্থ-ব্যবহারজনিত ব্যাধির দিকে। প্রভাবকে ভাগ করা হয়েছে তিন ধাপে—
১. তাৎক্ষণিক ও তীব্র(Acute): ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রভাব।
২. তাৎক্ষণিক- পরবর্তী (Post-acute): ১–২ মাস ব্যবহারের পর,
৩. দীর্ঘমেয়াদি :এক বছরের বেশি ব্যবহারের পরে অ-চিকিৎসামূলক গবেষণাগুলোতে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে, উচ্চ টি এইচ সি যুক্ত গাঁজা সাইকোসিস, স্কিজোফ্রেনিয়া এবং গাঁজা ঘটিত বৈকল্যর ঝুঁকি বাড়ায়। কোনো চিকিৎসামূলক গবেষণাতেই এ ধরনের মানসিক ব্যাধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব মেলেনি। তবে ভিন্ন ছবি দেখা গেছে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার ক্ষেত্রে। অ-চিকিৎসামূলক গবেষণার অর্ধেকের বেশি উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার সাথে নেতিবাচক যোগসূত্র দেখিয়েছে। চিকিৎসামূলক গবেষণার প্রায় অর্ধেক বলছে, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতায় গাঁজা কিছুটা উপকার করতে পারে। তবে এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ গবেষণা আবার নেতিবাচক প্রভাবের কথাও জানিয়েছে। ফলাফল বলছে, টি এইচ সি যত ঘন, ঝুঁকিও তত বেশি। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি গবেষকেরা। তারা সতর্ক করেছেন, বিদ্যমান গবেষণার নকশা ও মানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। বেশিরভাগই ছিল পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা, যা থেকে সরাসরি কারণ–ফলাফলের সম্পর্ক টানা কঠিন। তাদের দাবি, আরও শক্তিশালী, নিয়ন্ত্রিত গবেষণা দরকার, যাতে চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ মানুষ সবাই নির্ভরযোগ্য দিকনির্দেশনা পেতে পারে। গাঁজা নিয়ে সমাজে চলছে এক ধরনের দ্বৈত বাস্তবতা। একদিকে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে এর সম্ভাবনায় অনেকেই আশাবাদী। অন্যদিকে, অপ্রতুল প্রমাণ ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে গুরুতর মানসিক রোগের ঝুঁকি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই নতুন পর্যলোচনা যেন সেই বিতর্কে আরও একবার সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে দিল। গবেষণাটি শেষ পর্যন্ত একটি পরিষ্কার বার্তাই দিয়েছে- শুধু গাঁজার ঘনত্ব নয়, এর ব্যবহারিক প্রেক্ষাপট ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বোঝাও জরুরি। না হলে সাইকোসিস, স্কিজোফ্রেনিয়া কিংবা ক্যানাবিস ইউজ ডিসঅর্ডারের মতো গুরুতর মানসিক রোগের ছায়া ক্রমেই ঘনীভূত হতে পারে।
সূত্র: High-Concentration Delta-9-Tetrahydrocannabinol Cannabis Products and Mental Health Outcomes” 25 August 2025, Annals of Internal Medicine.