সকালে জলখাবার খাওয়ার পর অথবা সন্ধ্যাবেলায় খাওয়ার পর নিয়ম করে রক্তচাপ বশে রাখার ওষুধ খেতে হয় অনেককেই। না হলেই রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এই ধরনের ওষুধ এক বার খেতে শুরু করলে ছাড়ার উপায় থাকে না। আবার, সেই ওষুধ বন্ধ করলেও বিপদ! রক্তচাপ বেড়ে গেলে হার্টের উপর চাপ পড়ে। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। আমাদের শরীরের ঘুমোতে যাওয়া বা জেগে থাকার ছন্দ বা ক্রনোটাইপের সাথে তাল মিলিয়ে এই নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া আমাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এমন কথাই জানাচ্ছে একটি নতুন গবেষণা। গবেষণাটি ইক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা অনুসারে যারা রাতেরবেলা জেগে থাকে তাদের ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়া উপকারী বলে প্রতিপন্ন হতে পারে, আবার যারা ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তাদের ক্ষেত্রে সকালের সময়টা বেশি উপযোগী। এই সময়গুলো রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সংক্রান্ত ঝুঁকির ক্ষেত্রে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে বলে মনে করা হয়। নতুন এই গবেষণায় গবেষকরা ৫৩০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির ওষুধ খাওয়ার সময় ও ক্রনোটাইপ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সময়ে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের তারপর কয়েক মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
জিনগত ও অন্যান্য কারণের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি ব্যক্তির সার্কাডিয়ান রিদিম বা শরীরের ছন্দ বা ২৪-ঘন্টা জৈবিক চক্র সামান্য পরিবর্তিত হয়। এই ছন্দ আমাদের ঘুমের ধরনকে প্রভাবিত করে, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা, হরমোন, বিপাক – এবং এই গবেষণা অনুসারে আমাদের রক্তচাপের মাত্রা নির্ধারণ করতেও সাহায্য করে। আমাদের শরীরে সারা দিন রক্তচাপ বাড়ে কমে সুতরাং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ার সময়টা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে গবেষকরা অনুমান করেছেন। পূর্বেও এই ধারণাকে কেন্দ্র করে গবেষণা হয়েছে তবে ফলাফলগুলো কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসেনি। এই গবেষণায়, গবেষকরা হার্টের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের আগে অংশগ্রহণকারীদের ক্রোনোটাইপ শনাক্ত করতে চেয়েছিল কারণ ক্রোনোটাইপ উদ্বেগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্রোনোটাইপ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ না করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় – বিশেষত সেই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যারা রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং সকালে তাদের ওষুধ গ্রহণ করে। ব্যক্তি অনুসারে ঘুমের সময়ের পার্থক্য রোগের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে বলে গবেষকরা মনে করেন। যদিও এই গবেষণায় দেওয়া তথ্য ততটাও বিস্তৃত নয় যে এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় যে রক্তচাপের ওষুধের সময় ওষুধের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, তবে এই গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে গবেষকরা এই দুটির মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে ও তার পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা চালাতে আগ্রহী বোধ করবে।