
গম্বুজ-মাথা ডাইনোসর বা প্যাকিসেফালোসর ছিল ক্রিটেসিয়াস যুগের তৃণভোজী প্রাণী। এদের মাথার উপরের খুলি ছিল মোটা ও গম্বুজাকৃতির, যা তাদের অন্যান্য ডাইনোসর থেকে আলাদা করেছিল। কিন্তু এতদিন এদের বেশির ভাগ জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল কেবল খুলি বা ভাঙা হাড়ের টুকরো আকারে। তাই পুরো দেহের চিত্রটা একপ্রকার ধোঁয়াশায় ঢাকা ছিল।
সম্প্রতি মঙ্গোলিয়ায় পাওয়া গেল জাভাসেফালে রিনপোচে নামক এক নতুন প্রজাতি। প্রায় ১০৮ মিলিয়ন বছরের পুরোনো এই ডাইনোসর কেবল সবচেয়ে প্রাচীন প্যাকিসেফালোসরই নয়, বরং সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ নমুনাও বটে। এর মাথার খুলি, হাত, পা, কোমর, এমনকি শক্তিশালী লেজের হাড় পর্যন্ত সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। হাতের আঙুলের হাড় আবার এই গোত্রের মধ্যে প্রথমবার আবিষ্কৃত হলো, যা বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিরল সম্পদ।
আশ্চর্যের বিষয়, আকারে জাভাসেফালে ছিল একেবারেই ছোট – মোটে তিন ফুট লম্বা আর ওজন মাত্র ২০ পাউন্ড। অথচ এর উত্তরসূরি প্যাকিসেফালোসররা ছিল প্রায় ১৫ ফুট লম্বা ও ৬০০ পাউন্ড ওজনের দানবাকৃতি প্রাণী। ছোট হলেও জাভাসেফালের কিশোর বয়সেই মাথায় গম্বুজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগেই এরা মাথার এই অনন্য আকৃতি অর্জন করত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি ছিল তাদের এক ধরনের “পাঙ্ক ফেজ”অর্থাৎ কিশোর বয়সেই চোখে পড়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখানোর প্রবণতা।
এখন প্রশ্ন হলো, এই গম্বুজের কাজ কী ছিল? গবেষকরা ধারণা করছেন, এটি সামাজিক আচরণের অংশ ছিল। সঙ্গী আকর্ষণ, প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে মাথা ঠোকা, কিংবা দাপট দেখানো সবকিছুতেই হয়তো গম্বুজের ভূমিকা ছিল। এভাবে হাড়ের গঠনই হয়ে উঠেছিল একধরনের প্রাগৈতিহাসিক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক সাফল্য হলো, এতদিন মনে করা হতো প্রাচীন প্যাকিসেফালোসরদের খুলি সমতল ছিল। কিন্তু জাভাসেফালে দেখাল, প্রথম থেকেই তাদের মাথাটা আসল গম্বুজ তৈরি হয়েছিল। ফলে চীনের বিখ্যাত ওয়ানানোসরাসকে আর প্রাচীন রূপ ধরা যাচ্ছে না; বরং সেটি হয়তো এক অল্পবয়সী নমুনা মাত্র।
আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, কিছু ছোট আকারের গম্বুজসদৃশ মাথার ডাইনোসর,যেমন ড্রাকোরেক্স ও স্টিজিমোলক, যাদের আগে আলাদা প্রজাতি মনে করা হতো, তারা হয়তো আসলে বড় প্যাকিসেফালোসরের কিশোর বয়সের রূপই ছিল।
জাভাসেফালে রিনপোচে যে শুধু একটি নতুন প্রজাতি তা নয়। এটি হল বিবর্তনের এক সেতুবন্ধন, যা আমাদের জানায় কিভাবে কোটি বছর আগে ক্ষুদে প্রাণীর মাথার গম্বুজ তাদের করে তুলেছিল ডাইনোসরের রাজ্যের সবচেয়ে অনন্য ও নজরকাড়া চরিত্র।
সূত্র: A domed pachycephalosaour from the early cretaceous of Mangolia by Tsogtbaatar Chinzorig, Ryuji Takaski, et.al; (17.09.2025), published in Nature journal.