গরিলারা ‘গাছে ওঠার ওস্তাদ’

গরিলারা ‘গাছে ওঠার ওস্তাদ’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ জুলাই, ২০২৫

আমরা এতদিন ধরে নিয়েছিলাম, ভারী চেহারার গরিলারা ভূমি চারণেই বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক বিবর্তনমূলক নৃতত্ত্ব ইনস্টিটিউটে-র বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, গরিলারা আসলে অনেক বেশি সময় গাছে কাটায়, এমনকি ধূসর পিঠওয়ালা অতিকায় পুরুষ গরিলারাও। গ্যাবনের লোয়াঙ্গো এবং উগান্ডার বিউইন্ডি বনাঞ্চলে দীর্ঘ ৫,২০০ দিনের বেশি সময় ধরে এই গবেষণা চলে। দেখা যায়, লোয়াঙ্গোর স্ত্রী গরিলারা গাছে সময় কাটায় প্রায় ৩৪%, আর বিউইন্ডির স্ত্রী গরিলারা তুলনায় গাছে থাকে ২১%। পুরনো গবেষণাটা ভিরুঙ্গা পর্বতের গরিলাদের কেন্দ্র করে হয়েছিল। সেখানকার চিত্রটা যদিও অন্য। তারা গাছে মাত্র ৭% সময়ই ছিল বলে ধরা পড়েছিল। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট, সব গরিলা একরকম নয়। গবেষণার প্রধান ড. মার্থা এম. রবিন্স, বলছেন, “শুধু স্ত্রী গরিলা নয়, সিলভারব্যাকরাও ১৮-২০% সময় গাছে কাটায়। আগে ভাবা হতো, ওদের বিশাল ওজনই গাছে ওঠার জন্য এক বড় বাধা হয়ত।” প্রজাতি হিসাবে অতিকায় গরিলাগুলি ১৭০ কেজি ওজনেরও হয়। তবু তারা গাছে দিব্যি আরাম করে উঠে। ছোট গরিলারা তো আরও বেশি সময় কাটায়- প্রায় ৩২% থেকে ৪৩% সময়। এ থেকে বোঝা যায়, গাছ চড়ার ক্ষেত্রে ওজন প্রধান বাধা নয়। আসলে বিষয়টি আরও জটিল। গবেষকরা ভেবেছিলেন গাছে ওঠার প্রধান কারণ, ফল খাওয়া। কিন্তু দেখা গেছে লোয়াঙ্গোতে স্ত্রী গরিলারা পাতা খাওয়ার জন্যই বেশি গাছে ওঠে। অন্যদিকে বিউইন্ডিতে গাছে ওঠা মূলত ফল খাওয়ার উদ্দেশ্যেই। সিলভারব্যাকরাও গাছে উঠে ফল খায়। বিউইন্ডিতে ৮২% সময়েই তারা গাছে উঠে ফল খায়। কিন্তু ফল তাদের খাদ্যতালিকার মাত্র ১৪% জুড়ে আছে। বাকি সময়ে তারা গাছে ওঠে পাতা বা অন্য কিছু খাওয়ার তাগিদে। লোয়াঙ্গোতে আবার অনেক সময় গরিলারা মাটিতে পড়ে থাকা ফল খেতেই বেশি পছন্দ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রী গরিলারা বিশ্রাম বা ঘোরাফেরার চেয়ে অনেক বেশি গাছে ওঠে খাবার খাওয়ার সময়। এমনকি পাতা খাওয়ার সময়ও। লোয়াঙ্গোর গরিলারা বিউইন্ডির চেয়ে বেশি পাতা খেকো, তাই তারা গাছে থাকে বেশি। সুতরাং এই গবেষণা একটা বড় বার্তা দেয়, গরিলারা শুধু মাটির প্রাণী নয়। তারা নানা কারণে, নানা সময় গাছে ওঠে। কেবল ছোট বয়সে, কম ওজন থাকতে নয় বরং প্রাপ্তবয়সে ভারী শরীরেও তারা গাছে উঠতে স্বচ্ছন্দ। সুতরাং, পুরাতাত্ত্বিক নথিতে যদি গরিলা-জাতীয় হাড় পাওয়া যায়, তার মানে এই নয় যে তারা কেবল মাটিতে বাস করত। গবেষকরা বলেন, “পাতা-ভিত্তিক খাদ্যতালিকা থাকার জন্য গরিলারা প্রচুর গাছে ওঠে। এটিই যেন আমাদের ধারণা বদলে দিচ্ছে।” তাহলে মানতেই হচ্ছে গরিলারা ‘গাছে চড়ার ওস্তাদ’ও বটে। এই গবেষণার ফলে প্রাচীন মানবজাতীয় প্রাণীদের জীবনব্যবস্থা নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ যেসব গরিলা-সদৃশ জীবের হাড় পাওয়া গেছে, তাদের মাটিতেই থাকার সম্ভাবনার কথা ভাবা হতো। কিন্তু গাছে ওঠার দক্ষতা থেকে থাকলে ব্যাখ্যায় পরিবর্তন আনতে হবে বইকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × three =