গলদা চিংড়ি বা লবস্টার। মানুষের অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এই মাছ সম্পর্কে এক ঈর্ষণীয় (অন্তত মানুষের কাছে) কাহিনী সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এই মাছ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অমর! এই মাছের বয়স বাড়ে না! এর জিনেই রয়েছে রয়েছে চিরযৌবনের রসদ, জানিয়েছেন গবেষকরা। হাত খানেক লম্বা হলেও গলদা চিংড়ির কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হয় না। দেহের আয়তন বাড়লেও তাদের বয়স আটকে থাকে যৌবনেই। গবেশোকড়া জানিয়েছেন, যে কোনও প্রাণীর শারীরিক বৃদ্ধির পিছনেই দায়ী কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়া। একইসঙ্গে নানাধরনের হরমোনের ক্ষরণও প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলে প্রাণীদের। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর বিভাজন বন্ধ হয়ে যায় দেহকোশের। বন্ধ হয়ে যায় বৃদ্ধি। সেই কারণেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে কর্মক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি কিংবা অন্যান্য অনুভূতিও।
কোষ বিভাজন বন্ধ হওয়ার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছিলেন মানব-ক্রোমোজম নিয়ে। সেখানেই ধরা পড়ে, একটি বিশেষ ঘটনা। মানুষের ক্রোমোজমের দুই প্রান্তেই একটি বিশেষ বর্ম থাকে, যা পরিচিত টেলোমেরেস নামে। উল্লেখ্য, এই টেলোমেরেস থেকেই শুরু হয় কোষ বিভাজন। কিন্তু প্রত্যেকবার কোষ বিভাজনের পর, এই অংশটি ছোট হতে থাকে। আর সেই কারণেই, একটি নির্দিষ্ট সময় পর বন্ধ হয়ে যায় দেহের বৃদ্ধি। এই সময়কেই, যৌবনের শেষ বলে ধরে নেওয়া হয়।
তবে চিংড়ির ক্ষেত্রে, কোষ বিভাজনের পরও অক্ষত থাকে টেলোমেরেসে। সেটা হয় টেলোমারেজ নামের একটি উৎসেচকের জন্য। এই উৎসেচকই অমরত্ব প্রদান করে চিংড়িকে! ফলে সময়ের সঙ্গে তার দেহের আয়তন বাড়লেও যৌবন ফুরোয় না।
কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্বও চিরস্থায়ী নয়। আয়তন বাড়ায় চিংড়িকেও সাপের মতো একাধিকবার খোলস পরিবর্তন করতে হয়। চিংড়ির আয়তন যত বাড়ে স্বাভাবিক নিয়মেই তত বেশি সময় লাগে তার খোলস তৈরি করতে। আর এই মধ্যবর্তী সময়েই প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে মৃত্যু হয় তাদের। সহজেই তারা শিকার হয় অন্যান্য জলজ খাদকের। না হলে, আজীবনই বেঁচে থাকতে পারত চিংড়ি!