
ভাত বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া ধানের উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। বাদামি গাছফড়িঙ বা কারেন্ট পোকা (Planthoppers) এ অঞ্চলে ধানখেতের ব্যাপক ক্ষতি করে, যার ফলে কৃষক এবং এমনকি পুরো অর্থনীতির রীতিমতো ক্ষতি হয়।
লেইবনিজ ইনস্টিটিউট ফর জু অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ (Leibniz-IZW) এবং থাইল্যান্ডের প্রিন্স অফ সংখলা (Prince of Songkla University) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা দেখিয়েছেন যে ঠোঁট-কোঁচকানো ল্যাজঝোলা এক প্রজাতির বাদুড় (Wrinkle-lipped free-tailed bat), যার বিজ্ঞানসন্মত নাম মপস প্লিকাটাস (Mops plicatus), যারা দূর ভ্রমণের জন্য পরিচিত, তারা শুধু দূরত্বই অতিক্রম করে না, ভূমি থেকে ১,৬০০ মিটার উচ্চতায় শিকারও করে – যে উচ্চতায় ধানের জন্য ক্ষতিকারক প্ল্যান্টহপাররা উড়ে বেড়ায়। এমন উচ্চতায় কীটনাশক সহ অন্যান্য প্রচলিত কীট নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি কাজ করে না। অনেক উপরে উড়তে থাকা প্ল্যান্টহপারদের বিস্তার সীমাবদ্ধ করে রিঙ্কল-লিপড ফ্রি-টেইলড বাদুড়েরা। এইভাবে তারা কীট নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এভাবে তারা দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাতে অবদান রাখে। বৈজ্ঞানিক জার্নাল “ওইকোলজিয়া “-তে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তাই এই প্রজাতির সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং মূল্যর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এই বাদুড় প্রজাতির প্রাকৃতিক বাসস্থান, আশ্রয়স্থল এবং বিশ্রামের স্থানগুলি সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে বলেছেন। যদিও এই প্রজাতির বাদুড়ের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন, কিন্তু এদের বাসস্থান মাত্র বারোটি গুহা। পর্যটন এবং আনুষঙ্গিক সমস্যাগুলি থেকে এই গুহাগুলিকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের স্থানীয় কৃষক শুধু নয়, চীন, কোরিয়া ও জাপানের দূরবর্তী কৃষি অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও তা উপকারী। থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জন্য মপস প্লিকাটাস যে বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবাগুলি দেয় তা স্থানীয় সীমান্তের বাইরেও বহুদূর বিস্তৃত।