একশো বছর আগে এড্উইন হাব্ল প্রমাণ করেছিলেন যে তথাকথিত ‘স্পাইরাল’ নীহারিকাটি আমাদের এই আকাশগঙ্গা থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত । তার আগে বহুকাল ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন আকাশগঙ্গাই সারা ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে বিস্তৃত। হাব্ল-এর এই আবিষ্কার রাতারাতি মহাবিশ্বতত্ত্বের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বোঝা গেল, আমরা যা জানাতাম তার থেকে অনন্তগুণে বিশাল এই ব্রহ্মাণ্ড। আজ একশো বছর পরিয়ে সেই হাব্ল-এরই নামাঙ্কিত দূরবীক্ষণটি তারকা-সাম্রাজ্যের মনোমুগ্ধকর চিত্রটির একটি পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষার পথ পরিষ্কার করে দিল। সম্প্রতি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুও চুন-এর পরিচালনাধীন একটি কর্মসূচির প্রতিবেদন। তাতে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দক্ষিণার্ধের ১০ কোটি তারার ছবি ছাপা হয়েছে।. শত শত কোটি বছর আগে আকাশগঙ্গা আর অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি সম্ভবত একই সময়ে জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু এই পর্যবেক্ষণ থেকে যা সাক্ষ্য পাওয়া গেছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, মহাবিশ্বের একই মহলের বাসিন্দা হলেও এদের বিবর্তনের ইতিহাস একে অপরের থেকে আলাদা। অ্যান্ড্রোমিডায় বয়সে তরুণ তারার সংখ্যা বেশি। তাদের চরিত্র সুসংহত তারা-স্রোতের চেয়ে আলাদা। তার অর্থ, আকাশগঙ্গার তুলনায় অ্যান্ড্রোমিডায় অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক কালে তারা-গঠনের ঘটনার এবং আন্তঃক্রিয়ার ইতিহাস রয়েছে। বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল ওয়েইজ ছবিগুলো দেখে বলেছেন, ‘অ্যান্ড্রোমিডা যেন এক ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়। দেখে মনে হচ্ছে, গ্যালাক্সিটা এমন কোনো ঘটনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল যার ফলে প্রচুর তারা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু তারপরই আচমকা সবকিছু যেন স্রেফ থেমে গেছে। সম্ভবত এর কারণ, পরিপার্শ্বের অন্য কোনো একটা গ্যালাক্সির সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছিল’। যার সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল, সেটা হয়তো মেসিয়ের-৩২ নামের এক উপ-গ্যালাক্সি। একদা স্পাইরাল চেহারার এই উপ-গ্যালাক্সির আচ্ছাদন-মুক্ত শাঁসটি হয়তো অতীতে অ্যান্ড্রোমিডার সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটিয়েছিল। কম্পিউটারে ক্রিয়া-অনুসরণ (সিমুলেশন) করে মনে হচ্ছে, অন্য কোনো গ্যালাক্সির সঙ্গে জোর ধাক্কা লাগার পর এটি তারার ভিতরকার যাবতীয় গ্যাসের ভাণ্ডার শেষ করে ফেলে আর তখনই তারা-গঠনের প্রক্রিয়া স্তিমিত হয়ে পড়ে। দেখে মনে হচ্ছে অ্যান্ড্রোমিডা একটা উত্তরণ-কালীন ধাঁচের গ্যালাক্সি। তার চরিত্র একদিকে তারা-গঠনকারী স্পাইরাল, অন্যদিকে বয়স্ক লাল তারাদের প্রাধান্যযুক্ত এক ধরনের উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সির মাঝামাঝি। ওর মধ্যপ্রদেশে একটা স্ফীতি আছে। সেখানে রয়েছে অনেক প্রাচীনতর তারা আর একটা তারা-গঠনকারী চাকতি। এটকু বলা যাচ্ছে যে ওর ভর থেকে যা মনে হয়, ওর মধ্যপ্রদেশের এই স্ফীতিটা সে-পরিমাণ সক্রিয় নয়। । জানা চেহারার তারাদের এত সবিস্তার খুঁটিনাটির দিকে তাকানোর সুবিধা হচ্ছে, অতীতে ওই গ্যালাক্সির পারস্পরিক সম্মিলনের আর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসটা এবার খুঁজে বার করা যাবে।
https://science.nasa.gov/missions/hubble/nasas-hubble-traces-hidden-history-of-andromeda-galaxy/