বহুদিন পর সৌরজগতের “অদ্ভুত” বস্তুগুলির তালিকায় গ্রহাণুরা উঠে এলো। গ্রহাণু গ্রহ নয়, কিন্তু সৌরজগতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এদের মধ্যে অনেকগুলিই বৈজ্ঞানিকভাবে খুব অদ্ভুত। সব গ্রহাণুই যে মঙ্গল–বৃহস্পতি মাঝের প্রধান বলয়ে থাকে, তা নয়। কিছু গ্রহাণু বলয়ের বাইরে ঘুরে বেড়ায়। আর সেখানেই দেখা যায় চরম বৈচিত্র্য। এর সেরা উদাহরণ ‘সাইকি’। আয়তনে এটি ১৭তম হলেও ভরে ১০ম স্থানে রয়েছে। এ সব পরিচিত গ্রহাণুর মোট ভরের প্রায় ১ শতাংশ। এটি মূলত ধাতুর তৈরি। ধারণা করা হয়, এটি হয়তো কোনো ব্যর্থ গ্রহের উন্মুক্ত ধাতব কেন্দ্র, যার বাইরের স্তর সংঘর্ষে খসে পড়েছে। আরও চমকপ্রদ সম্ভাবনা হল, এখানে ফেরোভলকানিজম ঘটতে পারে, অর্থাৎ গলিত ধাতুর অগ্ন্যুৎপাত। ২০২৯ সালে নাসার সাইকি মহাকাশযান পৌঁছালে বিষয়টি হয়তো আরও পরিষ্কার হবে।
আরও এক বিস্ময় ‘ভেস্টা’। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহাণু এবং সবচেয়ে উজ্জ্বল। সূর্যালোকের প্রায় ৪০ শতাংশ আলোই এতে প্রতিফলিত হয়। ভেস্টার সবচেয়ে অদ্ভুত অংশ হল, ‘রিয়াসিলভিয়া’ নামের বিশাল আঘাতজনিত গহ্বর ও তার কেন্দ্রীয় শৃঙ্গ। এর উচ্চতা প্রায় ২২.৫ কিমি। উচ্চতায় এটি মঙ্গলের অলিম্পাস মন্সের সঙ্গে পাল্লা দেয়। একটি গ্রহাণুতে এত বড় “পাহাড়” সত্যিই বিস্ময়কর !
ডিসেম্বরে দেখা ‘জেমিনিড’ উল্কাবৃষ্টি সাধারণ ধূমকেতু থেকে আসা নয়, এটি আসে গ্রহাণু ‘’ফাইথন” থেকে। ফাইথন বরফাচ্ছাদিত না হলেও সূর্যের কাছে এলে উজ্জ্বল হয় ও এর লেজ তৈরি হয়, মূলত সোডিয়াম গ্যাসের কারণে। কিন্তু এই গ্যাসের লেজ থেকে উল্কাবৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। তাহলে জেমিনিডের ধ্বংসাবশেষ এল কোথা থেকে , তা এখনও রহস্যই। উপরন্তু, ফাইথনের রং নীলাভ, যা গ্রহাণুর ক্ষেত্রে বিরল। ২০৩০ সালে জাপানের ‘ডেস্টিনি+’ মিশন হয়তো এই রহস্যে আলো ফেলতে পারে। আরেক শ্রেণির গ্রহাণু হল, রাবল-পাইল । ঢিলা পাথর ও ধ্বংসাবশেষের স্তূপ, যা কেবল মাধ্যাকর্ষণের টানে একসঙ্গে থাকে। আকারে বড় হলেও এরা হালকা। ইটোকাওয়া, রিউগু বা বেন্নু সবই এই ধরণের গ্রহাণু। বেন্নু থেকে নমুনা নিতে গিয়ে ‘অসিরিস-রেক্স’ প্রায় ডুবেই গিয়েছিল, এতটাই ঢিলা এর পৃষ্ঠ।
সবচেয়ে বড় গ্রহাণু হল সিরিস। এর ব্যাস প্রায় ৯৫০ কিমি। সব গ্রহাণুর মোট ভরের প্রায় ৪০ শতাংশ একাই এর দখলে। মাধ্যাকর্ষণের টানে এটি গোলাকার, তাই একে বামন গ্রহও বলা হয়। সিরিসের অভ্যন্তর স্তরবিন্যাস, উজ্জ্বল দাগ (সম্ভবত বরফ-অগ্ন্যুৎপাতের চিহ্ন) এবং অতীতে তরল জলের সম্ভাবনায় এটি অত্যন্ত জটিল জগৎ হয়ে উঠেছে। এতসব উদাহরণ সত্ত্বেও গ্রহাণুর অদ্ভুত চরিত্রের সামান্যই জানা গেছে। এখনো অবধি প্রায় ১৪ লক্ষ গ্রহাণু শনাক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে ভেরা রুবিন মানমন্দির আরও কয়েক কোটি গ্রহাণুও হয়তো খুঁজে পাবে। নিশ্চিতভাবেই, তাদের অনেকেই আবারও আমাদের বিস্মিত করবে। আসলে বৈচিত্র্যই মহাবিশ্বের প্রকৃতি।
সূত্র : Rubin Observatory/NOIRLab/NSF/DOE/AURA; Planetary Profile: Abnormal Asteroids; Museum of Science.
