গ্রিনল্যান্ডের জীবাশ্ম সমুদ্র-স্তরের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়…

গ্রিনল্যান্ডের জীবাশ্ম সমুদ্র-স্তরের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ আগষ্ট, ২০২৪

বরফ পাতের মধ্যস্থলে বীজ, গাছের ডালপালা এবং পোকামাকড়ের অংশ বিজ্ঞানীদের আবাক করে দিয়েছে- নিশ্চিত করেছে যে সাম্প্রতিক অতীতে এই বরফের পাত গলে গিয়েছিল। গ্রিনল্যান্ডের সবুজায়ন বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করছে। সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণা থেকে জানা যায় যে শুধু গ্রিনল্যান্ডের প্রান্ত নয় বরফের চাদরের কেন্দ্রস্থলও অতীতে গলনের সম্মুখীন হয়েছে। এখন যে দ্বীপটি বরফের চাদরে আচ্ছাদিত সুদূর অতীতে সেখানে সবুজের সমারোহ ছিল। ১৯৯৩ সালে বিজ্ঞানীদের একটি দল গ্রিনল্যান্ডের একেবারে কেন্দ্রে প্রায় দুই মাইল গভীর বরফের পাতের নীচ থেকে কয়েক ইঞ্চি পলি সংগ্রহ করেন এবং সম্প্রতি তা পুনরায় পরীক্ষা করেন। তারা সেই মাটিতে উইলো কাঠ, পতঙ্গের অংশ, ছত্রাক এবং পোস্তর দানা আবিষ্কার করেন। এই জীবাশ্মগুলো বিজ্ঞানীদের কাছে সুন্দর হলেও আমাদের সকলের জন্য এটি খারাপ খবর বয়ে আনে। প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসে-এ প্রকাশিত এই গবেষণাটি নিশ্চিত করে যে কয়েক মিলিয়ন বছর আগে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে দ্বীপটি উষ্ণ আবহাওয়ায় সবুজ হয়ে উঠেছিল। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা বরফের পাতটি তাদের ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি পলকা, সহজেই ভেঙে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে বরফের গলে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় প্রান্তসীমার বেশিরভাগ বরফই গলেছিল। সম্ভবত হাজার হাজার বছর ধরে মাটি তৈরি হয়েছিল এবং বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছিল। নতুন এই গবেষণা নিশ্চিত করে যে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি এমন একটা সময়ে ঘটেছিল যখন উষ্ণায়নের কারণগুলো হয়তো সেভাবে চরম ছিল না। তাছাড়াও এটি আমাদের সতর্ক করে যে আমরা যদি জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে থাকি তবে আমরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বর্তমানে প্রতি দশকে এক ইঞ্চিরও বেশি বাড়ছে। এবং এটি দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছিল আগেই। নাসার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে আগামী ১০০-২০০ বছরের মধ্যেই সমুদ্রপৃষ্ঠ তিন ফুট অর্থাৎ এক মিটার বেড়ে যাবে। গ্রিনল্যান্ড এবং আন্টার্টিকায় খুব দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের এক মিটারের মধ্যে বসবাস করেন। এদের বেশিরভাগই এশিয়ার বাসিন্দা। এমনকি ফ্লোরিডা, সিঙ্গাপুর এবং টোকিওর মতো শহরও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের বেশ কিছু ব-দ্বীপও বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে এই বিপদ কোনওমতেই এড়ানো যাবে না বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ আমূলভাবে হ্রাস করা না গেলে পরবর্তী শতাব্দী থেকে কয়েক সহস্রাব্দের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের বরফ প্রায় সম্পূর্ণ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ২৩ ফুট বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + eight =