গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বজ্রপাতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বজ্রপাতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ অক্টোবর, ২০২৪

 

পৃথিবীতে উচ্চ শক্তির গামা বিকিরণের তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের কারণ বজ্রপাত। ১৯৯০-এর দশকে, সুপারনোভা, অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তু থেকে আসা উচ্চ-শক্তির কণাগুলো চিহ্নিত করার জন্য নির্মিত নাসা স্যাটেলাইট আশ্চর্যজনক এই আবিষ্কার করেছিল। গবেষকরা কয়েক দশক ধরে জানেন যে বজ্রঝড় ক্ষুদ্র কণা ত্বরণকারী হিসাবে কাজ করে, যাতে অ্যান্টিম্যাটার, গামা রশ্মি এবং অন্যান্য পারমাণবিক প্রক্রিয়া দেখা যায়। কিন্তু এই ঘটনা কী সব বজ্রপাতের সাথে ঘটে? রেট্রোফিটেড U2 স্পাই প্লেনের পর্যবেক্ষণ অনুসারে দেখা গেছে, সমস্ত তীব্র বজ্রঝড় গতিশীল, অপ্রত্যাশিত উপায়ে গামা রশ্মি তৈরি করে।
নেচার পত্রিকার গবেষণায় বলা হচ্ছে, তীব্র বজ্রপাতে সারাদিন ধরে নানা আকারে গামারশ্মি সৃষ্টি হয়। এর পেছনে কারণ হল বজ্রঝড় সৃষ্টি হওয়ার সময় ঘূর্ণায়মান জলের তরঙ্গ জলের ফোঁটা, শিলাবৃষ্টি, বরফের একটা মিশ্রণ তৈরি করে। যার থেকে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হয়। ইতিবাচক চার্জযুক্ত কণা ঝড়ের শীর্ষে উঠে যায়, ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কণা নীচে নেমে গিয়ে, এক বিশাল বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে। নেগেটিভ চার্জযুক্ত কণা, ইলেকট্রন এমন শক্তিশালী ক্ষেত্রে আরও ত্বরান্বিত হয়। তারা যথেষ্ট উচ্চ গতিতে ত্বরান্বিত হয়ে বায়ুর অণুতে আঘাত করতে পারলে, আরও উচ্চ-শক্তি ইলেকট্রন ছিটকে দেয়। এই প্রক্রিয়া ক্যাসকেডের মতো হতে থাকে। আর এই সংঘর্ষের ফলে পর্যাপ্ত শক্তি তৈরি হলে পারমাণবিক বিক্রিয়া হয় যার থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী দ্রুতগতির গামা রশ্মি, অ্যান্টিম্যাটার এবং অন্যান্য ধরণের বিকিরণ তৈরি হয়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সাধারণ বজ্রঝড়ের আকার অন্যান্য অক্ষাংশের ঝড়ের তুলনায় অনেক বড়ো হয়। এর আকারের পরিপ্রেক্ষিতে, গবেষকরা স্পাই প্লেনে দেখেছেন, গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সমস্ত বজ্রঝড়ের অর্ধেকেরও বেশি তেজস্ক্রিয়। একই বজ্রপাত থেকে স্বল্প সময়ের, তীব্র গামা বিকিরণ বিস্ফোরণের অসংখ্য উদাহরণ গবেষকরা দেখেছেন। এর মধ্যে কিছু উদাহরণ অবিকল নাসা উপগ্রহে পাওয়া চিত্রের মতো। এর থেকে গবেষকরা মনে করেন, বজ্রপাতের দ্বারা সৃষ্ট বৃহৎ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র সম্ভবত উচ্চ-শক্তির ইলেকট্রনগুলোকে সুপারচার্জ করে। যা তাদের উচ্চ-শক্তির পারমাণবিক বিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম করে। এই বিদ্যুতের ঝলকানি একরকম স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবির্ভূত হয়। গবেষকরা এইসব তথ্য থেকে ইঙ্গিত পাচ্ছেন, যে এগুলো আসলে বজ্রপাত শুরু করার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। কিন্তু এগুলো এগুলো থেকে এত বেশি তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয় যে এর কাছাকাছি গিয়ে অধ্যয়ন করা সম্ভব নয়।