গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যান্টার্কটিকায় ফুলের গাছ ছড়িয়ে পড়ছে

গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যান্টার্কটিকায় ফুলের গাছ ছড়িয়ে পড়ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সময়ের সাথে সাথে অ্যান্টার্কটিকাকে কেমন যেন অচেনা দেখাচ্ছে। স্থলভাগে ফুলের গাছপালা, শ্যাওলা ও শৈবাল আগের থেকে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ছে এবং সমুদ্রে দেখা যাচ্ছে ভাসমান বরফের চাঁই। এই নাটকীয় পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের (UW) গবেষকরা অ্যান্টার্কটিকায় প্রবল তাপপ্রবাহ রেকর্ড করেছেন। মার্চ মাসে, দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি তাপমাত্রা টানা তিন দিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। এক বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ব্ল্যানচার্ড-রিগলসওয়ার্থ-এর মতে এটি খুবই অস্বাভাবিক। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে জলবায়ু পরিবর্তনের রেশ অ্যান্টার্কটিকাকেও ছুঁয়েছে। তিনি আরও বলেন যে বিগত শতাব্দীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ ছিল এবং ২০৯৬ সালে এই একই ধরনের তাপপ্রবাহ ২০২২ সালের তুলনায় আরও ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ হবে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি অ্যান্টার্কটিকার মার্চের তাপমাত্রাকে বিপজ্জনকভাবে গলনাঙ্কের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে, যা মহাদেশের বিশাল বরফের জন্য ক্ষতিকারক প্রমাণিত হবে। বর্তমানে, অ্যান্টার্কটিকা এবং পাশাপাশি দ্বীপগুলোর বেশিরভাগ অংশই স্থায়ী তুষার এবং বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত। শুধুমাত্র এক শতাংশ বা তার একটু বেশি স্থল্ভাগে অ্যান্টার্কটিক হেয়ার গ্রাস, ডেসচ্যাম্পসিয়া অ্যান্টার্কটিকা এবং অ্যান্টার্কটিক পার্লওয়ার্ট বা কোলোবান্থাস ফেফেনসিস-এর মতো ফুলের গাছ রয়েছে। যদিও গত কয়েক দশকে, বসন্তকাল ও গ্রীষ্মের উষ্ণ তাপমাত্রায় এই ধরনের গাছপালা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির হার ২০% বা তার বেশি দেখা গেছে। কিছু বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস শতাব্দীর শেষ নাগাদ অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের বরফমুক্ত জমিতে উদ্ভিদের বিস্তার তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। গবেষকরা উদ্বিগ্ন কারণ এই অঞ্চলে গাছপালা এই হারে বৃদ্ধি পেলে অ্যান্টার্কটিকায় “অপরিবর্তনীয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি” হতে পারে। জীববিজ্ঞানী জ্যাসমিন লির মতে যদি সেখানে হাজার হাজার বর্গকিলোমিটার বরফ মুক্ত হয়ে পড়ে তবে উষ্ণ তাপমাত্রা এবং অতিরিক্ত জল পেয়ে কিছু প্রজাতির যেমন বিকাশ ঘটবে আবার কিছু প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের জলবায়ু বিদেশী উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির বেড়ে ওঠার জন্য অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করবে। তাই সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন অ্যান্টার্কটিকা ফুলের গন্ধে ভরে উঠবে। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এখন অ্যান্টার্কটিকার অতীত এবং বর্তমান আবাসস্থলগুলো বোঝার জন্য যতটা সম্ভব দ্রুত কাজ করছে যাতে তারা ভবিষ্যতের জন্য তাদের সংরক্ষণ করার চেষ্টা করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =