গ্লুটেনযুক্ত খাবার সহ্য হয় না- বিজ্ঞানীরা অবশেষে কারণ খুঁজে পেয়েছেন

গ্লুটেনযুক্ত খাবার সহ্য হয় না- বিজ্ঞানীরা অবশেষে কারণ খুঁজে পেয়েছেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ আগষ্ট, ২০২৪
গ্লুটেনযুক্ত খাবার

রোজকার খাদ্যতালিকায় আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবারের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। সে সকালের বিস্কুট বা কুকিজ়ই হোক বা টিফিনের টোস্ট, স্যান্ডউইচ, পাস্তা বা নুডলস অথবা সন্ধ্যেবেলার মোমো, পিৎজ়া, কেক, বার্গার বা রাতের চির চেনা রুটি-পরোটা। রোজকার এই খাবারগুলোই হয়ে উঠতে পারে ক্রনিক পেট ব্যথা বা ডায়রিয়ার কারণ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গমে থাকে গ্লুটেন নামে এক ধরনের প্রোটিন। মোটামুটি প্রতি একশোজনের মধ্যে একজনের অল্প পরিমাণে হলেও গ্লুটেন যুক্ত খাবারে অ্যালার্জি থাকতে পারে। যদিও গ্লুটেনের কারণে শরীরে ইমিউনোলজিকাল প্রতিক্রিয়াগুলোর জিনগত তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে তবে এর সাথে অন্যান্য অনেক কারণও জড়িত। এর ফলে গ্লুটেন সহ্য করতে না পারার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার চেইন ম্যাপ করা কঠিন। বিজ্ঞানীরা অবশেষে চিহ্নিত করতে পেরেছেন কীভাবে গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরি হয়। কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপরে করা গবেষণায় দেখেছেন অন্ত্রের আস্তরণ তৈরি করে এমন কোশের এই গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই অগ্রগতি সিলিয়াক রোগের জন্য নতুন চিকিত্সার দিক উন্মোচন করতে পারে। সিলিয়াক রোগ মূলত একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। এই রোগটি অন্ত্রে গ্লুটেনের উপস্থিতির কারণে ঘটে। গম, বার্লি বা রাই দিয়ে তৈরি খাবার অর্থাৎ বেশিরভাগ বেকড খাবার, পাউরুটি, পাস্তা, নুডুলস বা রোজকার আটা ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি পরোটা –এসব খাবারই পেটফোলা, ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কখনও কখনও রিফ্লাক্স এবং বমির কারণ। খাদ্যনালির ক্ষুদ্রান্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির বা মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতি হয়। বেশি দিন ধরে মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা খসে যেতে থাকে। তার জেরে পেট ভার, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। এই উপসর্গগুলো রোধ করার একমাত্র উপায় হল খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়া।
গবেষণায় দেখা গেছে অন্ত্রের আস্তরণ গ্লুটেন সংবেদনশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা দেখেছেন যে অন্ত্রের প্রাচীরের কোশ এই প্রতিক্রিয়ায় কেবল নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণকারী নয়; তারা সক্রিয়ভাবে গ্লুটেনের প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়াতে জড়িত। তাছাড়াও সিলিয়াক রোগে জেনেটিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯০% মানুষের এক জোড়া জিন থাকে যা HLA-DQ2.5 নামের প্রোটিন এনকোড করে। অবশিষ্ট ১০%-এর মধ্যে, বেশিরভাগেরই HLA-DQ8 নামে একই রকম একটি প্রোটিন রয়েছে। এই প্রোটিনগুলো গ্লুটেনের প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যাদের এই জিন রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই যে সিলিয়াক রোগ হয় এমন নয়। ফলে এটা স্পষ্ট যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণ রয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যৎ অধ্যয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্লুটেনের প্রতি যে সব ব্যক্তিরা সংবেনশীল তারা যাতে প্রতিকূল প্রভাব ছাড়াই গ্লুটেনযুক্ত খাবার উপভোগ করতে পারে সেই চেষ্টাই করছেন গবেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − two =