ঘর হারিয়ে বিপন্ন চড়াই

ঘর হারিয়ে বিপন্ন চড়াই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ জুন, ২০২৪

বাড়ির ঘুলঘুলিতে, কার্নিশে, খড়কুটো, শুকনো ঘাস পাতা দিয়ে বাসা বাঁধত চড়াই পাখি। কিন্তু আজ আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রভাবে তারা হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাঙালি গৃহস্থ জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চড়াই পাখিও জায়গা নেবে অবলুপ্ত প্রাণীদের তালিকায়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) এর বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছে চড়াই পাখি। বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির (বিএনএইচএস) ডেপুটি ডিরেক্টর বিভু প্রকাশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, কিছু রিপোর্ট অনুসারে বিগত তিন দশকে, দেশে চড়ুইয়ের জনসংখ্যা ৮০% হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি উদ্বেগজনক কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে এর সঠিক জনসংখ্যা এবং পাখিটির হ্রাসের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার কোনো উপায় নেই। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে চড়াই পাখিদের আবার দেখা মিলছে। লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ওয়াইল্ডলাইফ সায়েন্স প্রতি বছর স্থানীয়ভাবে চড়াই পাখির সংখ্যা গণনা করে এবং সেখানে জনসংখ্যার সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
চড়াই পাখির উৎপত্তিস্থল মধ্যপ্রাচ্য। কৃষিকাজের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে খুব ভালোবাসে। তাই এদের ইংরেজি নাম ‘হাউস স্প্যারো’। এরা মাটি থেকে পোকামাকড় শস্য খুঁটে খায়। এ ছাড়া ফুলের কুঁড়ি, বাদাম জাতীয় ফল খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই পাখিদের ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল বর্তমানে আমাদের বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা। বাসা তৈরি করার জায়গা আর নেই। মানুষের বাসস্থান বাড়লেও চড়াইদের বাসা বানানোর জায়গা কমে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এখন খাবারেও টান পড়ছে । সম্প্রতি ইউরোপের একটি গবেষণার উল্লেখ করে, প্রকাশ বলেন, হাজার হাজার চড়ুই ছানা অনাহারে মারা গেছে কারণ ডিম ফুটে বের হওয়ার পর প্রথম পাঁচ দিন তারা কেবল পোকামাকড়ের লার্ভা খেয়ে বেঁচে থাকে। বাড়ির বাগান, রান্নাঘরের বাগান এবং কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহারের কারণে পোকামাকড় নিঃশেষ হয়ে যায়। মা চড়ুইরা সারা দিন খুঁজে খুঁজে ছানাদের খাওয়ানোর জন্য পোকা ধরে নিয়ে আসতে পারে না। বেরেলির সেন্ট্রাল এভিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অশোক কুমার তিওয়ারি মনে করেন যে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এই পাখিদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বায়ু তরঙ্গের উপর মোবাইল টাওয়ারের সম্ভাব্য প্রভাব এবং এয়ার কন্ডিশনারের মতো গৃহস্থালীর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার চড়ুইয়ের জনসংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ। শব্দ ও বায়ু দূষণের ফলেও চড়ুই পাখির সংখ্যা আজ সংকটাপন্ন বলে তার অভিমত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + eleven =