ঘুম থেকে জেগে উঠবে কী ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি?

ঘুম থেকে জেগে উঠবে কী ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ জানুয়ারী, ২০২৫

আমেরিকার ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান। ১৯৭৮ সালে যাকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। সেই ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের নীচে নীচে ঘুমিয়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর এক ‘দৈত্য’! সেই আগ্নেয়গিরি আবার নড়াচড়া শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে আগ্নেয়গিরির তলদেশে যে ম্যাগমার প্রকোষ্ঠ রয়েছে তা ইয়েলোস্টোন ক্যালডেরার উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। ইউ এস জিওলজিক্যাল সার্ভে বিভাগের ভূতাত্ত্বিক নিফা বেনিংটনের নেতৃত্বে গবেষক দলের মতানুসারে এই অঞ্চলটি ভবিষ্যতের আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের নতুন কেন্দ্র হতে পারে।
ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানে রয়েছে গরম জলের ফোয়ারা আর উষ্ণ প্রস্রবণ। সঙ্গে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা দেখতে সারা বিশ্ব থেকে ভিড় করে আসে লাখ লাখ মানুষ। সুবিশাল সেই পার্কের নীচে অবস্থিত ইয়েলোস্টোন, বিশ্বের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে অন্যতম। একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং ধসে পড়ার সময় একটি সুবিশাল গর্তের মতো ডিপ্রেশান বা ক্যালডেরা তৈরি হয়। বিগত ২০ লক্ষ বছরে, ইয়েলোস্টোনে তিনটি বড়ো ধরনের ক্যালডেরা-গঠনকারী অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে। এছাড়াও কিছু কিছু ছোটো অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাও ঘটেছে। ইয়েলোস্টোনের ক্যালডেরা-গঠনের অগ্ন্যুৎপাত গলিত রাইওলিটিকের প্রকোষ্ঠ থেকে উৎসারিত হয়। রাইওলাইট একধরনের আগ্নেয় শিলা যাতে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা থাকে, কিন্তু লোহা এবং ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কম। এতে কোয়ার্টজ এবং ফেল্ডস্পারের ছোটে কেলাসও দেখা যায়। রাইওলাইট আঠালো, চটচটে ধরনের এবং যে জায়গা থেকে বেরোয় সেখান থেকে খুব বেশি দূরে প্রবাহিত হয় না। পূর্ববর্তী গবেষণায় অনুমান করা হয়েছিল যে রাইওলিটিক চেম্বারের সঙ্গে বেসাল্টিক ম্যাগমার চেম্বারও সেখানে অবস্থিত ছিল। গলিত বেসাল্টিক ম্যাগমায় রাইওলাইটের তুলনায় অনেক কম সিলিকা রয়েছে তবে প্রচুর পরিমাণে লোহা এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। রাইওলাইটের তুলনায় এর সান্দ্রতা কম এবং এটি আরও ঘন। তবে এটি যেভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে তা রাইওলাইটের থেকে আলাদা। পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচের কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করার জন্য পৃথিবী পৃষ্ঠের চৌম্বকীয় এবং বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের বৈচিত্র্য পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এটি ম্যাগনেটোটেলুরিক্স নামে পরিচিত এবং এটি ভূপৃষ্ঠের গলিত ম্যাগমার উপস্থিতির প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল। বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ইয়েলোস্টোনের গলিত ম্যাগমার আধার পর্যবেক্ষণ করেন। ভূবিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, এই এলাকায় দিনে গড়ে অন্তত পাঁচ বার কম্পন অনুভূত হয়। বিপদের জায়গা হল, ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে জাগিয়ে তুলতে অনেক সময়েই অনুঘটকের কাজ করে ভূমিকম্প। আমেরিকার গবেষকদের দাবি, ৭ কোটি ৬০ হাজার বছর আগে শেষ বার এটি জেগে উঠেছিল। ইয়েলোস্টোনের আগ্নেয়গিরি কবে আবার জেগে উঠবে তা জানতে অবশ্য ভূবিজ্ঞানীদের আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।