আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয় হল ঘ্রাণশক্তি। এই ঘ্রাণের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৪০০ রকমের একক ধরনের রিসেপ্টার বা গ্রাহক কোশ । আমরা যে শত-সহস্র ধরনের গন্ধ চিনতে পারি তার প্রতিটিই বিভিন্ন ধরনের গন্ধবাহী অণুর মিশ্রণে তৈরি। প্রতিটি গন্ধবাহী অণু কিছু রিসেপ্টরের সমষ্টি দ্বারা সনাক্ত করা যায়। আর সে কারণেই প্রতিবার কোনো নতুন ধরনের গন্ধ সনাক্ত করা মস্তিষ্কের কাছে একটি ধাঁধার মতো হয়ে দাঁড়ায়।
ঘ্রাণ সম্পর্কে আমাদের যে অজ্ঞতা ছিল তা UC সান ফ্রান্সিসকোর বিজ্ঞানীরা ভেঙে দিয়েছেন। তারা প্রথম ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে দেখিয়েছেন কীভাবে একটি গন্ধবাহী অণু মানুষের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহক বা রিসেপ্টরকে সক্রিয় করে তোলে। আর আমরা সবাই জানি গন্ধের অনুভূতি বোঝার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিগত দুই দশক ধরে ডিউক ইউনিভার্সিটির মলিকিউলার জেনেটিক্স এবং মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক এবং মাংলিকের সহযোগী হিরোকি মাতসুনামির এই ঘ্রাণ শক্তি নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। তার মতে নির্দিষ্ট সুরের মূর্ছনা্র জন্য যেমন পিয়ানোর সঠিক রীডে হাত রাখতে হয় ঠিক তেমনি একটা নির্দিষ্ট ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহক একটা নির্দিষ্ট গন্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। মাংলিকের পরীক্ষাগারে ক্রায়ো-ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি (ক্রায়ো -ইএম) নামে এক ধরনের ইমেজিং ব্যবহার করা হয় যার সাহায্যে গবেষকরা ছবিতে পারমাণবিক গঠন দেখে প্রোটিনের আণবিক আকার নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। কিন্তু গন্ধবাহী অণুকে ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহকের সাথে যুক্ত করার পূর্বে গবেষকদের প্রথমে পর্যাপ্ত পরিমাণে রিসেপ্টর প্রোটিন পরিশুদ্ধ করতে হয়। কিন্তু এই ধরনের কাজের জন্য ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহক পরীক্ষাগারে তৈরি করা প্রায় অসম্ভব।
মাংলিক এবং মাতসুনামির সহযোগী দল এমন এক ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহকের সন্ধানে ছিল যা শরীর এবং নাক উভয়েই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং যা জলে দ্রবণীয় গন্ধও সনাক্ত করতে পারে। তারা ভেবেছিলেন যে এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সহজ হবে । তাই তারা OR51E2 নামক রিসেপ্টর বেছে নেয় যা প্রোপিওনেটের ( যা সুইস পনিরের তীব্র গন্ধের জন্য দায়ী) উপ্সথিতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পরীক্ষাগারে এই OR51E2 তৈরি করাও কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণ ক্রায়ো-ইএম পরীক্ষায় পারমাণবিক-স্তরের চিত্র তৈরি করতে এক মিলিগ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, কিন্তু মাংলিকের ল্যাবের সিনিয়র বিজ্ঞানী, ক্রিশ্চিয়ান বিলেসবেলে, OR51E2এর এক মিলিগ্রামের মাত্র ১/১০০ ভাগ ব্যবহার করেই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহক ও গন্ধবাহী অণুর ছবি গবেষকদের নাগালের মধ্যে চলে আসে। বিলেসবেলে বলেছেন যে দীর্ঘ সময় ধরে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত বাধা এই পদ্ধতিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেগুলো তারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন । তারা প্রথম ইমেজিং পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখেন যখন মানুষ কোনো গন্ধ পায় তখন কীভাবে গন্ধবাহী অণু একটা ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহকের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এই আণবিক ছবিতে দেখা গেছে যে প্রোপিওনেট, OR51E2 এর সাথে শক্তভাবে আটকে থাকে।
প্রোপিওনেটের জন্য সুইস পনিরে বাদামের সুগন্ধে থাকলেও এর গন্ধ মানুষকে ক্ষুধার্ত করে তোলেনা। মাংলিকের মতে এই ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের গ্রাহক শুধুমাত্র প্রোপিওনেটকে সনাক্ত করতে পারে। হয়ত খাবার খারাপ হয়ে গেলে তা সনাক্ত করার জন্য এর বিবর্তন ঘটেছে। তার অনুমান, মেনথল বা ক্যারাওয়ের মতো ভালো গন্ধের রিসেপ্টরগুলো গন্ধবাহী অণুর সাথে আরও আলগাভাবে যুক্ত হয়ে থাকে।