চাঁদের ওপর পৃথিবীর প্রভাব

চাঁদের ওপর পৃথিবীর প্রভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ জানুয়ারী, ২০২৫

পৃথিবীর উপগ্রহ, চাঁদ শুধু কবিদের কাছে রহস্যময় নয়, তার প্রকৃত বয়স বিজ্ঞানীদের কাছেও বেশ রহস্যময়। আমাদের গ্রহের ইতিহাসে শেষ দৈত্যাকার সংঘর্ষের ফলে চাঁদের জন্ম। প্রথম দিকের পৃথিবী, আর মঙ্গল-আকারের একটা প্রোটোপ্ল্যানেটের মধ্যে সংঘর্ষ থেকে চাঁদের জন্ম হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই ঘটনার সময় চাঁদের পাথরের নমুনার ডেটিং থেকে অনুমান করা হয়েছে। এই পাথর চাঁদের ম্যাগমার মহাসাগর থেকে কেলাস আকারে পাওয়া গেছে। এই ডেটিং থেকে চাঁদের বয়স প্রায় ৪৩৫ কোটি বছর বয়স অনুমান করা হচ্ছে। চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে সংগৃহীত নমুনা থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়, সৌরজগত যখন থেকে আকার নেওয়া শুরু করেছে, তার প্রায় ২০০ কোটি বছর পরে, চাঁদ গঠিত হয়েছিল। বর্তমান থেকে সেই সময় প্রায় ৪৩৫ কোটি বছর আগে। কিন্তু এই সময়সারণী নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। চাঁদের এই বয়সের তাপীয় মডেল এবং অন্যান্য প্রমাণের মধ্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা যেমন চাঁদের পৃষ্ঠে কিছু জিরকন খনিজ, যাদের বয়স, থেকে মনে হয় চাঁদের বয়স ৪৫১ কোটি বছর পর্যন্ত হতে পারে।
আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সের অধ্যাপক ফ্রান্সিস নিমো জানিয়েছেন, হিসেব অনুযায়ী ৪৩৫ কোটি বছরের থেকে বেশি পুরানো শিলা চাঁদে থাকার কথা নয়। কারণ সমস্ত শিলা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিয়ে একই রিসেটিংয়ের মধ্যে গেছে। সৌরজগত যখন গঠিত হচ্ছে, সেই বিশৃঙ্খল প্রারম্ভিক সময়ে, ধ্বংসাবশেষ ও মহাকর্ষীয় বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে গ্রহগুলো তৈরি হয়েছিল। ২০০ কোটি বছরের মধ্যে, এই ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগই বৃহত্তর মহাকাশীয় বস্তুতে শোষিত হয়েছে। যার ফলে অনেক গবেষক যারা সৌরজগতের বিবর্তন মডেল তৈরি করেন তারা মনে করেন ২০০ কোটি বছর পড়ে এত বড়ো সংঘর্ষ সম্ভব নয়, যা থেকে চাঁদ তৈরি হতে পারে।
নেচারে প্রকাশিত “আইডিয়া পেপার”-এ নিম্মো এবং তার সহ-লেখকরা এই অসঙ্গতির সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে চাঁদ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জোয়ারের টানের কারণে আবার গলে “রিমেলটিং” হয়েছিল। ফলে চাঁদে নানা ভূতাত্ত্বিক উত্থান ও তীব্র উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের মতে এই রিমেলটিং -এর ফলে চাঁদের শিলার বয়স পুনরায় সেট হয়েছে, যাতে চাঁদের আসল বয়স ঢাকা পড়ে গেছে। জোয়ারের উত্তাপ হল এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে দুটি মহাকাশীয় বস্তুর মধ্যকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণ ঘটে যাতে তীব্র উত্তাপ সৃষ্টি হয়। চাঁদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব সম্ভবত প্রাথমিকভাবে বেশ বেশি ছিল, কারণ তখন চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি ছিল। সর্বশেষ মডেল অনুসারে, চাঁদের প্রাথমিক বছরগুলোতে নির্দিষ্ট সময়কালে, চাঁদের কক্ষপথ অস্থির হয়ে থাকত, ফলে এটা পৃথিবী থেকে তীব্র জোয়ার-ভাটা অনুভব করত যা চাঁদের ভূতত্ত্বকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে উল্লেখযোগ্য তাপমাত্রা সৃষ্টি করত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =