আমাদের সৌরজগতের কোনও চাঁদেরই আজ বলয় নেই। তবে কী আগে এই উপগ্রহদের বলয় ছিল? সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় জানা গেছে যে, চাঁদের বলয় যদি থাকত তবে সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর মহাকর্ষীয় টান উপেক্ষা করে সে বলয়গুলো হয়তো কোটি কোটি বছর ধরে স্থিতিশীল থাকত। এই উপগ্রহগুলোর কেন কোনও বলয় নেই তা আজও রহস্যাবৃত। আমাদের সৌরজগতের অনেক গ্রহেরই বলয় রয়েছে। সম্ভবত শনি গ্রহ সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ। সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহটির কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাকে ঘিরে থাকা বলয় যা হাজার হাজার ছোটো বলয় দিয়ে তৈরি আটটি প্রধান বলয় দ্বারা আবৃত। সৌরজগতে বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনেরও বলয় রয়েছে। বরফের টুকরো এবং বিভিন্ন আকারের পাথরের খণ্ড, ধ্বংসস্তূপ, ধুলোর সমন্বয়ে গঠিত এই বলয়। সেফার্ড মুন বা ছোটো ছোটো চাঁদের মহাকর্ষীয় বল এই বলয়গুলো তাদের স্থানে ধরে রাখে। গবেষকদের ধারণা হয়তো পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহেরও একসময় বলয় ছিল। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনও গবেষণায় বলা হয়নি যে আমাদের সৌরজগতের ৩০০-রও বেশি চাঁদের চারপাশে কোনও স্পষ্ট বলয় রয়েছে। চাঁদের ক্ষেত্রে বলয়ের অনুপস্থিতি আরও বেশি রহস্যময় কারণ বলয় তৈরির ভৌত প্রক্রিয়া তাত্ত্বিকভাবে গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহ উভয় ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। যখন কিছু বরফের টুকরো বা ধ্বংসাবশেষ কোনও বস্তুকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে তখন তার চারপাশে একটি বলয় তৈরি হতেই পারে। এই ধ্বংসাবশেষ কোনও গ্রহাণু বা ধূমকেতুর আঘাতের ফলে গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে চারপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে, অথবা শক্তিশালী ক্রায়োভোলকানো থেকে নির্গত বরফের ধোঁয়া দ্বারা গঠিত হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে সেগুলো হয়তো একটি বলয়ে পরিণত হতে পারে। আর উপগ্রহের ক্ষেত্রে এই বলয় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি কারণ উপগ্রহ গ্রহাণুর আঘাতের শিকার হয়েছে বা তাদের পৃষ্ঠে ক্রায়োভোলকানো রয়েছে – তবুও, তারা বলয়হীন রয়ে গেছে। এর কারণ অনুসন্ধানে লেগে পরেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৪ সালে অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স জার্নালে সে গবেষণা প্রকাশিত হয়।
আমাদের পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহের চাঁদগুলোতে বলয় নেই কেন? গবেষকদের মতে সূর্যের বিকিরণ এবং চাঁদের মূল গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রের চার্জযুক্ত কণা বা মহাকর্ষীয় নয় এমন বিভিন্ন কারণ পূর্বে তৈরি সমস্ত বলয়গুলোকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু অনেক গবেষকই এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেন না। ক্যালিফোর্নিয়ার এসইটিআই ইনস্টিটিউটের গ্রহ বিজ্ঞানী ম্যাথিউ টিসকারেনো মনে করেন দীর্ঘ সময়ে, বলয়গুলো সম্ভবত মূল চাঁদগুলোর মহাকর্ষীয় টানে ভেঙে গেছে। যেহেতু সৌরজগতের বেশিরভাগ চাঁদ খুব ধীরে ধীরে ঘোরে যে কোনও বলয় কণা চাঁদের ঘূর্ণনের চেয়ে অনেক দ্রুত চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে মূল চাঁদগুলোর মহাকর্ষীয় টান, বলয় কণার কক্ষপথকে ক্ষয় করে তাদের চাঁদের পৃষ্ঠে এসে আঘাত করতে বাধ্য করবে। তাই বলা যেতে পারে পৃথিবীর চাঁদের কখনও বলয় থাকলে তা হয়তো অনেক আগেই চন্দ্র পৃষ্ঠে আঘাত করে ধ্বংস হয়ে গেছে।