চাঁদের হাঁসি বাঁধ ভেঙেছে

চাঁদের হাঁসি বাঁধ ভেঙেছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুলাই, ২০২৪
চাঁদ

রোমান্টিসিসম থেকে ছেলে ভোলানো, পুরাণ থেকে নতুন যাত্রা, উপন্যাস থেকে সিনেমা – ‘মধ্যমণি চাঁদ’। টেলিস্কোপে চোখ রাখলে দেখা যাবে, উজ্জ্বল হালকা রঙ এর এক আভা চাঁদকে লেপটে রয়েছে। ঠিক যেন কোনও শিল্পীর ক্যানভাসে একটা বিমূর্ত পেন্টিংয়ের মধ্যে তুলির ছোঁয়া। সেখানে চাঁদকে ঘিরেই, সে কোন গল্প লিখছে। নাসার তোলা ছবি থেকে প্রকাশিত এই শৈল্পিক চিত্র আসলে – চাঁদের ঘূর্ণি। কয়েকশ মাইল প্রসারিত। কোনো নভোচারী বা রোভার এখনও চাঁদের এই ঘূর্ণি পরিদর্শন করেননি। সাম্প্রতিক কম্পিউটার মডেলিং এবং মহাকাশযানের তথ্য, চাঁদের ঘূর্ণির ওপর আলোকপাত করেছে। এই গবেষণা জার্নাল অফ জিয়োফিসিক্যাল রিসার্চ প্ল্যানেট-এ প্রকাশিত হয়েছে।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণায়মান শিলাগুলো চুম্বকীয়। আর চাঁদে ক্রমাগত আঘাত হেনে চলা সৌর বায়ু কণাকে এই চুম্বকীয় শিলাগুলো সরিয়ে দেয়। মানে একপ্রকারের দেহরক্ষকের মতো কাজ করে। তখন, সৌর বায়ু-কণার আঘাত কাছাকাছি অন্য শিলার ওপর পরে, আর সময়ের সাথে সাথে, সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এই শিলাগুলো কালো হয়ে যায়। দূর থেকে তাই ঘূর্ণি দেখতে হালকা রঙেরই লাগে।
চাঁদের তো কোনো চৌম্বক ক্ষেত্র নেই। তাহলে কিভাবে চাঁদের ঘূর্ণায়মান শিলা চুম্বকীয় হয়ে গেল? ব্যর্থ প্রেমিক কিংবা লৌহ মানবের মতো উল্কাপিন্ড, নিয়মিতভাবে চাঁদের পিঠে আঘাত হানে। আর এই আঘাতের ফলেই, ঐ এলাকাগুলি লোহা সমৃদ্ধ উপাদানে ভরে যায়। সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির, এনভায়োরনমেন্টাল অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল জে ক্রাউকজিনস্কি এমনটাই বলেছেন। কিন্তু এমন কিছু ঘূর্ণি রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নন। এর মধ্যে কিছু বিরাটকায় ঘূর্ণিও রয়েছে। তিনি আরও জানান, পৃথিবীর শিলাগুলো খুব সহজে চুম্বকে পরিণত হয়, কারণ এর মধ্যে প্রায়শই চৌম্বকীয় খনিজ ম্যাগনেটাইটের ক্ষুদ্র কণা থাকে। কিন্তু চাঁদে এধরনের কোনো চুম্বকীয় খনিজ না থাকলেও ইলমেনাইট নামে এক ধরনের খনিজ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যা বিক্রিয়া করে লোহার কণা তৈরি করতে পারে। পরিস্থিতিতি ভেদে, তা চুম্বকীয় হয়ে যেতে পারে। গবেষকদের মতে এই ঘূর্ণিগুলো সাবসারফেস ম্যাগমা থেকেই তৈরি হয়।
শুধু ঘূর্ণি নয়, ঘূর্ণির উৎস নির্ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদের পৃষ্ঠের আকৃতি, চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্রের ইতিহাস, গ্রহ ও চাঁদ কীভাবে তাদের চারপাশের মহাকাশ-পরিবেশকে প্রভাবিত করে, তার হদিশ দেবে ঘূর্ণির উৎস। এই গবেষণা, চাঁদে ভবিষ্যত মিশনকে তথ্য ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে ক্রাউকজিনস্কির অন্য থিয়োরি, চাঁদের মাটির নিচের লাভা ধীরে ধীরে শীতল হয়ে চৌম্বকীয় অসঙ্গতি তৈরি করে। সেই চৌম্বকীয় অসঙ্গতিগুলো খুঁজতেও সাহায্য করবে এই গবেষণা।