চার বিস্ময়কর আবিষ্কার 

চার বিস্ময়কর আবিষ্কার 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ নভেম্বর, ২০২৫

বিজ্ঞান কখনও কখনও এমন আবিষ্কার করে, যা অদ্ভুতুড়ে মনে হলেও সেই আবিষ্কারগুলোই ভবিষ্যতের মানবজীবনকে বদলে দিতে চলেছে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই চারটি “ভৌত অথচ বিস্ময়কর” উদ্ভাবন।

১) ল্যাবে -গড়া ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক, ২) মাকড়সা-প্রেরণায় তৈরি ব্যান্ডেজ গ্লাভস, ৩) উল্ফ আপেল স্টার্চের খাদ্য আবরণ, ৪) মানুষের চোখে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান।

বিজ্ঞানীরা এ সি এস সেন্সরস জার্নালে জানিয়েছেন, তারা মানব স্নায়ুকোষ থেকে এক ক্ষুদ্র, জীবন্ত মস্তিষ্ক তৈরি করেছেন। দুই বছরের মধ্যে কোষগুলো নিজেদের মতো সংগঠিত হয়ে ত্রিমাত্রিক গঠন ধারণ করে এবং আসল মস্তিষ্কের মতোই বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠাতে শুরু করে। এই “মিনি-ব্রেইন” ভবিষ্যতে প্রাণী-পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে, এবং আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার এক নতুন পথ খুলে দেবে।

এ সি এস অ্যাপ্লায়েড মেটেরিয়ালস অ্যান্ড ইন্টারফেসে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, বিজ্ঞানীরা মাকড়সার জালের নকশা অনুকরণ করে এমন এক গ্লাভস তৈরি করেছেন, যা আঙুলের অগ্রভাগ থেকে অতি সূক্ষ্ম পলিমার তন্তু ছুড়তে পারে। এই গ্লাভস দিয়ে যেকোনো স্থানে তাৎক্ষণিক ব্যান্ডেজ তৈরি করা যায়— হাসপাতালে, খেলার মাঠে, যুদ্ধক্ষেত্রে। এটি জীবাণুমুক্ত, হালকা ও বহনযোগ্য। অর্থাৎ রেডিওঅ্যাকটিভ মাকড়সা নয়, এবার সত্যিকারের বিজ্ঞানেই এসেছে স্পাইডার ম্যানের মতো জাল নিক্ষেপের ক্ষমতা।

আবার, ব্রাজিলের এক অনন্য ফল উল্ফ আপেল থেকে প্রাপ্ত স্টার্চ দিয়ে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন একটি প্রাকৃতিক, খাওয়া যায় এমন প্রলেপ। দেখা গেছে, এই আবরণ অ-পাকা গাজরকে ১৫ দিন পর্যন্ত টাটকা রাখে। এতে কোনো রাসায়নিক সংরক্ষক নেই, সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী এই খাদ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য অপচয় রোধের নতুন পথ দেখাতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এ হতে পারে এক যুগান্তকারী সমাধান।

 

সবচেয়ে অস্বস্তিকর আবিষ্কারটি এসেছে এ সি এস এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটার্স থেকে। বিজ্ঞানীরা ১২টি মৃত মানুষের চোখ পরীক্ষা করে প্রত্যেকটির রেটিনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন। এর ধরন ও পরিমাণ ভিন্ন হলেও ফল একটাই। প্লাস্টিক এখন মানুষের শরীরের ভেতরেও জায়গা করে নিচ্ছে। এই গবেষণা ভবিষ্যতে চোখের স্বাস্থ্যের উপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দেবে।

 

“ভৌত বিজ্ঞান” আসলে ভয় দেখাতে নয়, আমাদের ভাবনা-চিন্তায় পরিবর্তনের কাণ্ডারী হয়ে এসেছে। ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক, মাকড়সার গ্লাভস, উল্ফ আপেলের প্রলেপ কিংবা চোখের মাইক্রোপ্লাস্টিক—সবকিছুই বুঝিয়ে দিল, বিস্ময়ই বিজ্ঞানের আসল রূপ। বিজ্ঞানের সীমা যত বাড়ছে, মানুষ তত গভীরে প্রবেশ করছে নিজের অস্তিত্ব ও প্রকৃতির রহস্যে।

 

সূত্রঃ “Inkjet-Printed 3D Sensor Arrays with FIB-Induced Electrode Refinement for Low-Noise Amperometric Recordings in hiPSC-Derived Brain Organoids” by Inola Kopic, Hu Peng,et.al;(21.08.2025), ACS Sensors.

DOI: 10.1021/acssensors.4c03740

“Wearable, Ultralow Power, and Needleless Electrospinning Equipment for Cannabidiol-Loaded Patch Fabrication” by Omar Blandon Cruz, Lihua Lou, et.al;(14.08.2025), ACS Applied Materials & Interfaces.

DOI: 10.1021/acsami.5c14853

“Characterization of Solanum lycocarpum Starch and Its Application as Edible Coating in Minimally Processed Baby Carrots” by Lohana M. C. Carvalho,et.al;(26.08.2025), ACS Food Science & Technology.

DOI: 10.1021/acsfoodscitech.5c00182

“Detection and Characterization of Multiple Microplastics in the Human Retina” by Menghui Zhang, Sisi Liu, et.al;(6.10.2025), Environmental Science & Technology Letters.

DOI: 10.1021/acs.estlett.5c00903

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − four =