চাষের ক্ষেতে ফুলগাছ রোপণ করে ফসলের ভালো উৎপাদন হয়েছে

চাষের ক্ষেতে ফুলগাছ রোপণ করে ফসলের ভালো উৎপাদন হয়েছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

ভারতীয় খামারে খাদ্য ফসলের সাথে ফুল রোপণ করে মৌমাছিকে আকর্ষণ করা গেছে, যা পরাগায়ন বাড়িয়ে ফসলের ফলন বাড়ায়, এবং গুণমান উন্নত করে, গবেষকরা জানিয়েছেন। গবেষণাটি, ২৮ নভেম্বর জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড ইকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে, এটি দক্ষিণ ভারতে ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং, ইউকে এবং এম এস স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিবেশবিদদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা সজনে ডাঁটার উপর গবেষণা করেছেন, যা একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ “সুপারফুড” এবং এর পরাগায়নকারী হল মৌমাছি। বাগানে সজনে গাছের পাশাপাশি গাঁদা ফুল এবং লাল ছোলা রোপণের মাধ্যমে, ফুলের প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্যের জন্য নানা ধরনের পতঙ্গ পরিদর্শন করেছে, যাতে পরাগায়নের উন্নতি এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধি হয়েছে।
গবেষক দল ভারতের তামিলনাড়ুর কানিভাদি অঞ্চলে ২৪ টি সজনে ক্ষেতে ক্ষুদ্র কৃষকদের সাথে কাজ করেছে। তারা কৃষকদের ১২ টি বাগানে লাল ছোলা এবং গাঁদা ফুল রোপণ করতে সাহায্য করেছিল এবং বাকি ১২ টিতে কোনও ফুল গাছ রোপন করা হয় নি। ১২টি লাল ছোলা এবং গাঁদা ফুলওয়ালা ক্ষেতে ফুলের পতঙ্গদের সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য ৫০% এবং ৩৩% বেশি ছিল। ফুলওয়ালা ক্ষেতে যেখানে নানা ধরনের বেশি পোকামাকড় এসেছিল সেখানে সজনে শুঁটি বড়ো ও ফসলের গুণমান ভালো হয়েছিল।
সজনে গাছ পূর্বে পরাগায়নের অভাবের কারণে ভুগছিল লাল ছোলা এবং গাঁদা ফুল ক্ষেতে রোপণ করার পর সজনে গাছে উচ্চ ফলন দেখা গিয়েছিল৷ ফুলসহ ফসলের ক্ষেতে সজনে ডাঁটার সংখ্যা ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ফুলছাড়া সজনে ক্ষেতে হয় নি৷ বৃহত্তর ফলন এবং উচ্চ মানের ফল ক্ষুদ্র চাষী সম্প্রদায়ের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং ভাল খাদ্য সরবরাহ করেছে। এছাড়া চাষী সম্প্রদায় তাদের খাদ্যে প্রোটিনের উৎস হিসাবে লাল ছোলা ব্যবহার করতে পারে এবং গাঁদা ফুল বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় পেতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং টিমের নেতৃত্বে ইউরোপের গবেষণা থেকে প্রমাণ নিয়ে, তা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে যেখানে পরাগায়ন নির্ভর ফসল জন্মায় সেখানে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা খুঁজতে গবেষণাটি করা হয়েছিল। ভারতে উচ্চ অর্থনৈতিক ও পুষ্টি মূল্যের অনেক ফসল রয়েছে, যেমন আম এবং সজনে, সেখানে ফসলের পরাগায়ন পরিষেবাগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি এবং উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে নিবিড় চাষাবাদের অনুশীলন, প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক কীটনাশক এবং সার ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ক্ষতি দেশীয় মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারীদের জীববৈচিত্র্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের ফসল স্থানীয় পরাগায়নকারীদের উপর নির্ভর করে, তারা এই প্রভাবগুলির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সমীক্ষার ফলাফলগুলি দেখায় কিভাবে কৃষকরা তাদের জমিগুলিকে আরও টেকসই পদ্ধতিতে পরিচালনা করার সাথে সাথে ফলন বাড়াতে পারে।