চীনের প্রাচীর রক্ষার পিছনে এক ধরনের জীবন্ত বস্তু

চীনের প্রাচীর রক্ষার পিছনে এক ধরনের জীবন্ত বস্তু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

হাজার হাজার বছর ধরে, দীর্ঘ প্রসারিত মাটির এবং পাথরের প্রাচীর যা সম্মিলিতভাবে গ্রেট ওয়াল নামে পরিচিত তা চীনের শাসক রাজবংশের কর্তৃত্বের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রাচীরটি প্রকৃতপক্ষে চীনদেশের উত্তর সীমান্ত বরাবর খ্রিস্টপূর্ব ৭ ম শতাব্দীর শাসকদের দ্বারা নির্মিত দুর্গ, টাওয়ার, প্রচীরের সারি। এর কাঠামো সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের ফলে গবেষক এবং পর্যটকরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়কে উপলব্ধি করতে পারছে।
চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং স্পেনের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এই ঐতিহাসিক নিদর্শনে জৈবিক উপাদান থাকার ঝুঁকি এবং সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছে। বায়োক্রাস্ট হিসাবে পরিচিত, লাইকেন, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, শ্যাওলা এবং অন্যান্য ছোটো গাছপালা কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত নানা জায়গায় পাতলা স্তর তৈরি করেছে। কেউ কেউ ভয় পান যে এই ধরনের জীবের বৃদ্ধির সাথে জড়িত ভৌত এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি গ্রেট ওয়ালের মতো স্মৃতিস্তম্ভের ক্ষয় ঘটাবে, এই নিদর্শনের স্থাপত্য দীর্ঘায়িত করার জন্য এই জৈব পদার্থ সরিয়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, দেখা যায় বায়োক্রাস্টগুলি মাটিকে বাতাস এবং বৃষ্টির দ্বারা জীর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, নীচের রেগোলিথের জন্য একটি ঢাল হিসাবে কাজ করে।
বায়োক্রাস্টগুলি প্রত্নতত্ত্বকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে কিনা এ বিষয়ে ধারণা পেতে, গবেষকদের একটি দল গ্রেট ওয়ালের প্রায় ৬০০ কিলোমিটার ব্যাপী একটি বিস্তৃত জরিপ পরিচালনা করেছে, শুষ্ক জলবায়ুতে থাকা অংশগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। এই গবেষণা সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত হয়েছে। প্রাচীরে দুর্গ থাকার সাথে, এর বিখ্যাত কিছু অংশে পাহাড়ী শৈলশিরা পাথরের সাপের মতো ঘুরে ঘুরে তৈরি করা হয়েছে। প্রাচীরের অনেক পুরোনো টুকরো কাঠের ফ্রেমের মধ্যে কাদামাটি সমৃদ্ধ মাটি গেঁথে শক্ত পাথরে পরিণত করে তৈরি করা হয়েছিল। আরও শুষ্ক অঞ্চলে, যেমন গোবি মরুভূমিতে, বালির স্তর, নুড়ি, এবং টামারিস্ক নামক একটি ছোট ঝোপের শাখা দিয়ে শক্তিশালী মাটির বিকল্প বানিয়ে প্রাচীর তৈরিতে লাগানো হয়েছিল।
এই প্রাচীরের প্রাচীন অংশগুলি সময়ের সাথে সাথে বাতাস, বৃষ্টির কারণে ক্ষয় হয়েছে। গবেষক দলের দেখা অবশিষ্ট ঢালাই মাটির প্রাচীরের গঠনের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং শ্যাওলার বায়োক্রাস্টে আবৃত ছিল, মাঝে মাঝে লাইকেনের প্রজাতি এখানে সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছে। গবেষকরা দেখেছেন গাছপালা এবং জীবাণুর নীচে থাকা দেওয়ালের নমুনাগুলি কম ছিদ্রযুক্ত এবং জৈব ক্রাস্ট না থাকা দেয়াল থেকে সংগ্রহ করা উপাদানগুলির মতো সহজে ভেঙে পড়েনি। শ্যাওলা এবং লাইকেনের শিকড় এবং ফিলামেন্টগুলির জন্য অল্প পরিমাণে ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু প্রমাণগুলি থেকে গবেষকরা বলেছেন, যে জৈব পদার্থের ঢালাই করা মাটির কণাগুলিকে বাঁধার ক্ষমতা সামগ্রিক কাঠামোর ক্ষতির করার চেয়ে বেশি উপকারী । বায়োক্রাস্টগুলির ক্ষয়যোগ্যতার তুলনায় প্রতিরক্ষামূলক কার্যকারিতা তাদের জৈবিক আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য জৈব ক্ষয় থেকে অনেক বেশি, যা প্রাচীরকে আরও সুরক্ষা দিচ্ছে।