চ্যাটবট ও মানুষ: প্রতিদ্বন্দ্বী না সহযোগী?

চ্যাটবট ও মানুষ: প্রতিদ্বন্দ্বী না সহযোগী?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

প্রতিদিনই আমরা কোনো না কোনো ডিজিটাল সহকারী ব্যবহার করছি। কখনও অনলাইনে পণ্য কেনার সময়, কখনও হোটেলে । প্রশ্ন হলো, সাহায্যটা মানুষ দিচ্ছে না মেশিন? আর সেটা কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ?

সম্প্রতি ডেনমার্কের আলবর্গ ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক হলগার রোশ্ক-এর নেতৃত্বে ৩২৭টি পরীক্ষা ও প্রায় ২.৮ লক্ষ অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে এক বিশাল মেটা-অ্যানালিসিসে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। ফলাফল চমকপ্রদ । মানুষ চ্যাটবট বা রোবটকে মানবিক না ভাবলেও, নিজেদের সিদ্ধান্ত ও কাজের ক্ষেত্রে এই মেশিনগুলোর দক্ষতা প্রায় মানুষের সমান।

গবেষকরা তিন ধরনের ডিজিটাল প্রতিনিধি নিয়ে কাজ করেছেন—

১)রোবট: যারা শারীরিক কাজ করে,

২)চ্যাটবট: যারা কথোপকথনের মাধ্যমে সাহায্য করে,

৩)অ্যালগরিদম: যারা তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

দেখা গেছে, মানুষ মেশিনকে আবেগহীন ভাবলেও বাস্তবে তার পরামর্শ মানে। কার্যকরী সিদ্ধান্ত বা আচরণে মানুষ ও মেশিন প্রায় সমান। বিশেষ করে লজ্জাজনক বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে, যেমন ব্যক্তিগত পণ্য কেনা বা বিব্রতকর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে চ্যাটবটরা মানুষের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ, মেশিন কখনো বিচার করে না, সমালোচনা করে না, আর গোপনীয়তা বজায় রাখে। ফলে সামাজিক চাপে না পড়ে ব্যবহারকারীরা সহজে সিদ্ধান্ত নেয়।

চ্যাটবটের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে তার নাম, ভাষা ও গতির ওপর। কথোপকথনে দক্ষতা তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত মানবসদৃশ বানানো আচরণ কখনো কখনো বিপরীত ফল দেয়।মানুষ তখন অস্বস্তি বোধ করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিশ্বাস। একবার কোনো অ্যালগরিদম ভুল করলে মানুষ তার ওপর থেকে আস্থা হারায় – যদিও একই ভুল কোনো মানুষ করলে তা মাফ হয়ে যায়।

সব কাজ মেশিনের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কাজগুলোতে সহানুভূতি, উপস্থিত বুদ্ধি বা জটিল ব্যাখ্যা প্রয়োজন, সেখানে মানুষ এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু মেশিন দ্রুততা, নিয়ম মেনে চলা ও তথ্য বিশ্লেষণে দক্ষ। তাই গবেষকরা বলছেন, যেখানে মেশিন শক্তিশালী সেখানে তাদের ব্যবহার করা উচিত, আর মানুষকে রাখা উচিত যেখানে মানবিক স্পর্শ ও অনুভূতি প্রয়োজন।

 

গবেষণাটি এক নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে মানুষ ও মেশিনের কাজের ক্ষেত্র আলাদা হয়ে যাবে। মেশিন শারীরিক ও মানসিক চাপের কাজ সামলাবে। আর মানুষ পরিচালনা করবে সম্পর্ক, সহানুভূতি ও সৃজনশীলতার কাজ। অর্থাৎ, চ্যাটবটরা মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহকর্মী হতে চলেছে।

 

সূত্র: Automated Versus Human Agents: A Meta-Analysis of Customer Responses to Robots, Chatbots, and Algorithms and Their Contingencies by Katja Gelbrich, Holger Roschk,et.al;published in Journal of Marketing.(28.09.2025).

https://doi.org/10.1177/00222429251344139

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =