
যখন কোনও আগ্নেয়গিরি ম্যাগমাকে লাভা রূপে উদগিরণ করে তখন এটি বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে ছাই ছড়িয়ে দিতে পারে ঠিক সেই জায়গায় যেখানে সাধারণত মেঘ গঠিত হয়। এই বায়ুমিশ্রিত সূক্ষ্ম কণাগুলি (অ্যারোসল) মেঘ গঠনে ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা দীর্ঘদিন ধরে আবহবিদদের কাছে এক রহস্য ছিল।
সম্প্রতি লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একদল বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন যে আগ্নেয়গিরির উদগিরণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মেঘ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁরা নাসার ক্লাউডস্যাট ও ক্যালিপসো মিশনের সংগৃহীত ১০ বছরের উপগ্রহ উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, মেঘে বরফ গঠনের সূচনাপর্বে ছাই-ঠাসা আগ্নেয় উদগিরণের একটা ভূমিকা আছে। আগ্নেয়গিরির ছাই উঁচু বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে বরফ কণিকা তৈরির কাজে এক ধরনের ‘নিউক্লিয়েশন’ বা গাঠনিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ছাইযুক্ত উদগিরণের পরে সৃষ্ট মেঘে বরফ কণিকার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, প্রতিটি কণিকার আকার বড়। পাশাপাশি উচ্চতায় গঠিত সাইরাস মেঘ — যেগুলো পাতলা, হালকা এবং মূলত বরফ দ্বারা গঠিত — এসব ঘটনার পরে আরও বেশি দেখা যায়। বিপরীতে, যেসব আগ্নেয় উদগিরণে ছাই কম থাকে, উদগিরণের পর মেঘে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
গবেষকদের প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে এই বরফ গঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঠান্ডা জলের কণা থেকে (হোমোজিনিয়াস নিউক্লিয়েশন) ঘটে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে,জলের কণা ছাড়াই ছাইয়ের কণার গায়ে জমে ( হেটেরোজিনিয়াস নিউক্লিয়েশন) বরফ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, ছাই-কণিকা বরফ গঠনের একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করেছে। আগে এতটা স্পষ্টভাবে এটা জানা ছিল না।
এই আবিষ্কার আমাদের মেঘ সংক্রান্ত ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে, কারণ মেঘ পৃথিবীর শক্তি ভারসাম্যে বড় ভূমিকা রাখে। এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে এবং তাপ আটকে রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কাঠামো গঠনে এই তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণার লেখক লিন বলেন, তাঁদের প্রাথমিক ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়া এবং নতুন একটি ব্যাখ্যার জন্ম দেওয়াটাই ছিল এ গবেষণার সবচেয়ে কঠিন এবং সবচেয়ে ফলপ্রসূ অংশ। ভবিষ্যতে তাঁরা বড় আকারের উদগিরণের মাধ্যমে এই গবেষণাকে নতুন করে আরও যাচাই করতে চান। এ ছাড়াও, দলটি এখন কুমেরু অঞ্চলের মেঘ এবং বৈশ্বিক জলবায়ুতে তাদের প্রভাব নিয়েও গবেষণা করছেন।