ছেলেদের ফ্লু কি আলাদা?

ছেলেদের ফ্লু কি আলাদা?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুলাই, ২০২৪
ছেলেদের-ফ্লু

লিঙ্গ ভেদে রোগের প্রকারভেদ আছে বইকি। ‘ফ্লু’ শব্দটার সাথে আমরা বহুল পরিচিত। কিন্তু “ম্যান ফ্লু” মানে ‘ছেলেদের ফ্লু’ শুনলেই কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে লাগে। আগেকার জামানা থেকে দেখে এসেছি দাদু বা বাবার সাধারণ সর্দি কাশি হলে রুমাল হাতে তারা খাটে বসে থাকত। কিন্তু ঐ একই কারনে, আমাদের মা ঠাকুমাদের হেঁসেলের কাজ থেকে রেহাই মিলত না। তারা রান্না করত, বাসন মাজত, কাপড় কাচত বলতে গেলে বাড়ির সমস্ত কাজ করত, সবার দেখাশোনা করত। বর্তমানেও যে চিত্রটা খুব একটা বদলেছে, তা বলা যায় না।
তাহলে সত্যিই কী পুরুষদের ‘ফ্লু’ এর পিছনে আলাদা কোন জৈবিক কারণ আছে? নাকি কেবলই তারা একটা ওজার অজুহাতে নিজেদের আলসেমিতে রাখতে চান?
ম্যান ফ্লু বলতে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণকে বোঝায় – সাধারণ ঠান্ডা লাগা, সর্দি, ফ্লুর মতো কিছু লক্ষণ। ম্যান ফ্লু আর সাধারণ ফ্লু অনেকটা একই, দুটোরই একই রকমের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দুটিই ভাইরাস ঘটিত। তবে দুটির ক্ষেত্রে, আলাদা রকমের ভাইরাস দায়ী থাকে। তবে ম্যান ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে আরও গুরুতর উপসর্গ যেমন জ্বর, শরীরে ব্যথা, কাঁপুনি এবং মাথাব্যথা দেখা যায়। অন্যদিকে সাধারণ সর্দি-কাশিতে গলাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, নাক বন্ধ ও হাঁচি বেশি হয়। দুই ক্ষেত্রেই কাশি হতে পারে। দুই ক্ষেত্রেই বিশ্রাম, তরল খাবার খাওয়া, প্রয়োজনে পেইনকিলার, ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করে উপসর্গ কমানো যায়।
আর ম্যান ফ্লু এবং সাধারণ ফ্লুর মধ্যে পার্থক্য কী? পার্থক্যও অবশ্যই আছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে হওয়া ফ্লু কখনও কখনও বেশ মারাত্মক, কারণ এর ফলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে। অন্যদিকে সাধারণ সর্দির ক্ষেত্রে রাইনোভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস বিভিন্ন ভাইরাস দায়ী, যা খুব একটা গুরুতর হয় না। সাধারণ সর্দির তুলনায় এই ফ্লু হঠাৎ করে শুরু হয়। গুরুতর ফ্লুর প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ থাকলেও সাধারন ঠান্ডা লাগার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভাইরাল নেই।
যদিও মহিলাদের মতে, তাদের লক্ষণগুলো অনেক বেশি গুরুতর। তবে গবেষণা বলছে অন্য কথা।
পুরুষরা তাদের উপসর্গগুলিকে, আসলেই অতিরঞ্জিত করছেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ থেকে আট দিনের মধ্যে, মহিলাদের মধ্যে উপসর্গ কমতে থাকে এবং তারা তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে পুরুষরা খুব ধীরে ধীরে সুস্থ হন। গবেষণায় এও দেখা গেছে পুরুষ এবং মহিলাদের লক্ষণগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। গুরুতর রাইনোসাইনুসাইটিসের ক্ষেত্রে ন্যাজাল প্যাসেজ এবং সাইনাস ফুলে যায়, নাক বন্ধ থাকে অথবা নাক দিয়ে জল ঝরে, মাথাব্যথা হয়।
আসলে, পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পার্থক্য রয়েছে। এই কারণেই পুরুষদের মধ্যে লক্ষণ গুরুতর আকার নিতে পারে। মহিলাদের শরীরে অনেক সহজেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাই তারা টিকার ক্ষেত্রেও আরও কার্যকরভাবে সাড়া দেয়। অন্য দিকে, মহিলাদের ইমিউন সিস্টেমের অন্যান্য দিকগুলো আরও জোরালোভাবে কাজ করে, টিকার ক্ষেত্রেও বেশি সাড়া দেয়। মহিলাদের ইমিউন সিস্টেমের অন্যান্য দিকগুলোও অনেক শক্তিশালী। এখন প্রশ্ন হল এমন হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ আছে কী? সম্ভবত আংশিক কারণ হল, X ক্রোমোজোম গুরুত্বপূর্ণ ইমিউন ফাংশন এর জিন বহন করে। মহিলাদের এই X ক্রোমোজোম দুটি থাকে। তার সুবিধা মহিলারা পায়। তাছাড়াও ইস্ট্রোজেন হরমোনও ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে শক্তিশালী করে বলে মনে করা হয়। যদিও সারা জীবন জুড়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা এক থাকে না, পরিবর্তিত হয়। আর তার ফলে মহিলাদের ইমিউন সিস্টেমের শক্তিও পরিবর্তিত হয়। তাছাড়াও পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে সংক্রমণের হার এবং ভাইরাস সংক্রমণের প্রক্রিয়া, ব্যক্তির বয়স, সামাজিক এবং আচরণগত কারণের উপরও নির্ভর করতে পারে। মহিলারা অনেক বেশি সচেতন। ‘মার্দ কো দার্দ নেহি হোতা’ সিনেমাতেই শুনতে ভালো। তাই রোগের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভেদ না করে, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পুরুষদের উৎসাহিত করুন।