ছোট আকারে, বড় ক্ষতি

স্বল্পমেয়াদী সুবিধা দেখতে দেখতে, আমরা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির দিকে এগিয়ে চলেছি বহু পণ্যের হাত ধরে। এই যেমন ধরুন, অনুষ্ঠান বাড়ি, অফিসের কনফারেন্স কিংবা বিমান সফরে ব্যবহৃত ছোট বোতল। অন্যদিকে স্বল্প খরচ, স্বল্প জায়গা নেওয়া কফি ,শ্যাম্পু, চিনির ছোট ছোট পাউচ… প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হলেও, সেটা সেই অব্দিই সীমিত । কাজের কাজ আদপেই কিছু হচ্ছে না।

এই ধরনের পণ্যের সহজলভ্যতা, কোম্পানিগুলিকে চরম লাভের মুখ দেখালেও, দীর্ঘকালীন ক্ষতির জায়গাটিকে ‘অন্ধের দিন রাতের’ মতন অদেখা করছে। অদেখা করছি আমরাও। নিষিদ্ধ হওয়া তো দূরে থাক বরং রমরমিয়ে চলছে বিকি কিনি। এই বিষয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ২০১৮ সালে, একমাত্র মহারাষ্ট্রে, এই ছোট বোতলগুলিকে নিষিদ্ধ করা হলেও, বোতল কোম্পানি থেকে জানানো হয় তারা এই বোতল গুলিকে ‘বাই ব্যাক'(ফের কিনে) পদ্ধতির মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা নেবে। কিছু দিনের মধ্যেই মহারাষ্ট্র সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয়। তারপর সেই আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।

আমরা, বছরে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন শ্যাম্পু বা এই ছোট পণ্যের পাউচ প্যাকেট উৎপাদন এবং ব্যবহার করছি। যদি এই ছোট ছোট প্যাকেটগুলি থেকে একটা বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করা হয়, তাহলে বোধহয় গোটা পৃথিবী, সেই ব্যাগ দিয়ে ঢাকা পড়বে। আমরা এগুলিকে একবার ব্যবহারের পরেই ছুঁড়ে ফেলে দিই তবে কাগজ কুড়ুনিরা এগুলোকে তাদের ‘যোগ্য পণ্য’ হিসেবে গণ্য করেনা। কারণ, এই পাউচ প্যাকেটগুলি মাল্টি লেয়ার প্লাস্টিক( অ্যালুমনিয়াম, প্লাস্টিক, কাগজ ) দিয়ে তৈরি। এগুলিকে সহজে পূর্ণব্যবহার- উপযোগী করা যায় না। প্রকৃতির সাথে সম্পূর্ণভাবে মিশে যেতে, এদের সময় লাগে ৪৫০ মিলিয়ন বছর। এভাবেই এগুলি যত্রতত্র- মাটিতে কিংবা জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জল দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ এবং সামুদ্রিক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীগুলির বৈচিত্র হ্রাসের ক্ষেত্রে এই প্লাস্টিক পাউচগুলি বিশেষ ভূমিকা রাখে, সে কথা বলা বাহুল্য। ভূলবশত, হামেশাই এই প্যাকেটগুলি জলজ প্রাণীদের খাবার হয়ে যাচ্ছে। আর দুর্ভাগ্য, কিছুদিনের মধ্যেই তারা মারা যাচ্ছে।

সুতরাং এর পরের বার ‘ব্যবহারের এবং খরচের সুবিধা’ দেখার আগে আমাদের সবাইকে একবার ভাবতে হবে এর আসল মূল্য ঠিক কতটা ভয়াবহ !