ছড়া বা গানের মাধ্যমে শিশুরা ভাষা শেখে

ছড়া বা গানের মাধ্যমে শিশুরা ভাষা শেখে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

অভিভাবকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশু ছড়া বা গানের মতো করে বা ছন্দের তালে তালে তাদের শিশুদের সাথে কথা বলা উচিত। এমনটাই বলছেন গবেষকরা, কারণ তাদের মতে শিশুরা তাদের শৈশবের প্রথম মাসগুলোতে ধ্বনিগত তথ্য নয়, ছন্দের মাধ্যমে ভাষা শেখে। শব্দের মূল উপাদান হল ধ্বনি, শব্দ বিশ্লেষণ করে ধ্বনি উৎপন্ন হয় এবং কিছু ভাষাবিদরা মনে করেন এই ধ্বনি হল ভাষার মূল ভিত্তি। শিশুরা এই ছোটো ছোটো ধ্বনি শিখে তা একে ওপরের সাথে মিলিয়ে শব্দ তৈরি করতে শেখে। কিন্তু এই নতুন গবেষণা অনুসারে শিশুরা এই ধ্বনি বা ফোনেটিক তথ্য খুব দেরিতে এবং ধীরে ধীরে শেখে বরং, ছন্দ মিলিয়ে কথা শিশুদের পৃথক শব্দের সীমারেখার উপর জোর দিয়ে ভাষা শিখতে সাহায্য করে এবং তা জীবনের প্রথম কয়েক মাস কার্যকর।
ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ এবং ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের গবেষকরা শৈশবের প্রথম বছরে শিশুদের ধ্বনিগত তথ্য প্রক্রিয়া করার ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করেন। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুরা ধ্বনিগত তথ্য সফলভাবে এনকোড করতে পারে না এবং ১১ মাস বয়সে যখন শিশুরা তাদের প্রথম শব্দ বলতে শুরু করে তখনও তারা এই প্রক্রিয়া সফলভাবে করতে পারে না। কেমব্রিজের নিউরোসায়েন্টিস্ট, প্রফেসর ঊষা গোস্বামী বলেন যে প্রায় সাত মাস পর্যন্ত শব্দের স্বতন্ত্র ধ্বনি শিশুরা প্রক্রিয়া করতে পারেনা, যদিও বেশিরভাগ শিশু এই সময়ে ‘বোতল’ বা এই জাতীয় কিছু পরিচিত শব্দ চিনতে পারে। গবেষকরা চার, সাত এবং এগারো মাস বয়সী ৫০টি শিশুর মস্তিষ্কের নার্ভ ইম্পালসের নমুনা রেকর্ড করেছেন যে সময় শিশুরা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে ১৮টি শিশুদের ছড়া গাওয়ার একটি ভিডিও দেখেছিল। গবেষকরা দেখেন যে শিশুদের মধ্যে ফোনেটিক এনকোডিং জীবনের প্রথম বছরে ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং তারা প্রথমে তালু ব্যবহার করে ধ্বনি বলতে শেখে যেমন ‘ড’ এবং অনুনাসিক ধ্বনি যেমন ‘ম’ বা ‘ন’ বলতে শেখে। প্রফেসর জিওভানি ডি লিবার্তো, ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং এডিএপিটি সেন্টারের একজন গবেষকের মতে এটিই প্রথম প্রমাণ যে কীভাবে মস্তিষ্ক ফোনেটিক তথ্যের জন্য প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং সময়ের সাথে সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে তা পরিবর্তিত হয়। গবেষকরা এই অধ্যয়নে দেখার চেষ্টা করেন কীভাবে শিশুরা ভাষা শেখে এবং কীভাবে এটি ডিসলেক্সিয়া এবং ভাষা সংক্রান্ত ব্যাধির সাথে সম্পর্কিত। স্নায়ুবিজ্ঞানী, অধ্যাপক ঊষা গোস্বামী বিশ্বাস করেন যে শব্দের বিভিন্ন সিলেবলের উপর জোর দেওয়া এবং স্বরের উত্থান ও পতন হল ভাষা শিক্ষার মূল চাবিকাঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − six =