জটিল মস্তিষ্কের তত্ত্ব

জটিল মস্তিষ্কের তত্ত্ব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মানুষের মস্তিষ্ক বড়োই জটিল ও রহস্যময়। তার কোথায় কী ঘটছে, তা জানাই খুব কঠিন কাজ। মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ন’হাজার কোটি স্নায়ুকোশ বা নিউরন রয়েছে। প্রতিটা স্নায়ু কোশ আবার হাজার হাজার স্নায়ু কোশের সঙ্গে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে তথ্য আদানপ্রদান করে। মস্তিষ্কের কাজ অনেক। মিড ব্রেন বা মধ্যমস্তিক অঞ্চলের সুপিরিয়র কলিকুলাস প্রাণীদের বিভিন্ন দিক থেকে আসা উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দিতে সাহায্য করে। যেমন হঠাৎ আলোর ঝলকের দিকে মাথা ও চোখ ঘুরিয়ে দেখতে সাহায্য করে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা দেখায় যে মস্তিষ্কের এই অংশটি ভিজ্যুয়াল ক্যাটাগোরাইজেশন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো জটিল কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বস্তু এবং দেখা দৃশ্যকে আলাদা আলাদা শ্রেণিতে বিভক্ত করার ক্ষমতাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ভিজ্যুয়াল ক্যাটাগোরাইজেশন বা শ্রেণীকরণ। এই দক্ষতার মাধ্যমে আমরা আমাদের বন্ধু বা শত্রুকে আলাদা করতে পারি, খাবার জিনিস থেকে বিষাক্ত খাবারগুলোকে আলাদা করতে পারি। নেচার নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত এই নতুন গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা ভিজ্যুয়াল ক্যাটাগোরাইজেশনের সাথে জড়িত একাধিক মস্তিষ্ক অঞ্চল জুড়ে মস্তিষ্কের কোশের কার্যকলাপের তথ্য পরিমাপ করেছেন। গবেষকরা সুপিরিয়র কলিকুলাস এবং পোস্টেরিয়র প্যারিটাল কর্টেক্সের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেন যে শ্রেণিকরণের পিছনে সুপিরিয়র কলিকুলাসের ভূমিকা পোস্টেরিয়র প্যারিটাল কর্টেক্সের চেয়েও বেশি। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে উচ্চস্তরের বৌদ্ধিক ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে নিওকর্টেক্স নয় সুপিরিয়র কলিকুলাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকদের মতে এই ধরণের বৌদ্ধিক সংকেত এই স্থানে পর্যবেক্ষণ করা আশ্চর্যের বিষয় কারণ মস্তিষ্কের এই অঞ্চলটি ঐতিহ্যগতভাবে সরল স্থানিক অভিমুখী আচরণ এবং রিফ্লেক্সিভ ফাংশন বা প্রতিবর্ত ক্রিয়ার সাথে যুক্ত। সুপিরিয়র কলিকুলাস মস্তিষ্কের এমন একটি অঞ্চল যা বিবর্তনীয়ভাবে সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে সংরক্ষিত হয়, এমনকি যাদের আরও পরিশীলিত নিওকর্টেক্স নেই তাদের মধ্যেও। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী, মাছ এবং সরীসৃপ থেকে শুরু করে প্রাইমেট এবং মানুষের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী, সকলেই দেখা বস্তুর শ্রেণিকরণ করে থাকে। বস্তুটি কী তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বা বস্তুটি কী তাকে বাধা দেবে নাকি ক্ষতিকারক? নাকি বস্তুটি কোনো শিকারীকে দেখে পালিয়ে আসছে তার দিকে? এই দেখা মস্তিষ্ককে সজাগ করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গে নড়াচড়ার জন্য সংকেত পাঠায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে এছাড়াও এটি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নির্বাচন করে এবং বিভিন্ন অবস্থানে উদ্দীপনার দিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো জটিল কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।