জলরাশির উষ্ণতা মোকাবিলায় তাপসহনশীল প্রবাল

জলরাশির উষ্ণতা মোকাবিলায় তাপসহনশীল প্রবাল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

প্রবাল হল এক প্রকার অমেরুদণ্ডী সামুদ্রিক প্রাণী। ছোট্ট ছোট্ট প্রবালকীট এক সঙ্গে জড়ো হয়ে প্রাচীর গড়ে তোলে। প্রবাল প্রাচীর, সংলগ্ন ভূখণ্ডকে সামুদ্রিক ঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। এই প্রবাল প্রাচীর সম্প্রতি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন। সমুদ্রে তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হলে জল উষ্ণ হয়ে যায় ফলে প্রবালের গায়ে বসবাসকারী শেওলা- জুজ্যান্থেলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মৃত্যু হয় সেগুলোর। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটি কোরাল ব্লিচিং বলে পরিচিত। প্রবালের মৃত্যুহারও বৃদ্ধি পায়। ব্লিচিংয়ের ফলে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রবাল সবুজ রঙ হারিয়ে বিবর্ণ, সাদা হয়ে যায়। রিফ তার বর্ণময়তা হারিয়ে ফেলে। ২০১৬-১৭ সালেও একবার ‘এল নিনো’-র সময় এই ঘটনা ঘটে। ২০২৩-২৪ সালে সারা বিশ্বে চতুর্থ বারের জন্য প্রবাল তার রঙ হারিয়ে সাদা হয়ে পড়ে।
নতুন এক গবেষণায় গবেষকরা এমন এক ধরনের প্রবাল প্রজননে সক্ষম হয়েছেন যা সামুদ্রিক তাপপ্রবাহে আরও ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এই গবেষণা দেখায় যে একটি প্রজন্মের মধ্যে প্রবালের তাপ সহনশীলতা উন্নত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গবেষকরা সিলেকটিভ ব্রিডিং বা কৃত্রিম প্রজনন ব্যবহার করেছেন- এমন এক কৌশল যা হাজার হাজার বছর ধরে বিজ্ঞানীরা পছন্দসই বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণী এবং গাছপালা প্রজননে ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে, এই প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার প্রকৃতি সংরক্ষণের একটি হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কোরাল রিফ বা প্রবাল প্রাচীরের ক্ষেত্রে। কৃত্রিম এই প্রজনন পদ্ধতি প্রবালকে এই উষ্ণ আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে সময় দেয়। তবে গবেষকরা এও সতর্ক করেছেন যে ভবিষ্যতে যে হারে তাপমাত্রা উষ্ণ হচ্ছে সেই তুলনায় প্রবালের এই তাপ সহনশীলতার উন্নতি খুবই সামান্য। তাছাড়াও এই প্রক্রিয়া কোনোভাবেই উষ্ণ আবহাওয়ার সমাধান হতে পারে না। সমগ্র বিশ্বজুড়ে কোরাল ব্লিচিং –এ লাগাম টানতে আমাদের গ্রিননহাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে উষ্ণতা হ্রাস করায় সচেষ্ট হতে হবে।