জাপান ফের পরমাণু পথে 

জাপান ফের পরমাণু পথে 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফুকুশিমা বিপর্যয়ের ধ্বংসস্তূপ এখনো জাপানের জাতীয় স্মৃতিতে তাজা। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার প্রায় দেড় দশক পর আজ আবারও পারমাণবিক শক্তির পথে ফিরছে দেশটি। জাপান সরকার বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কাশিওয়াজাকি–কারিওয়া পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত তাদের একদিকে জ্বালানি নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছে, অন্যদিকে পুরোনো ক্ষতকে নতুন করে উসকে দিচ্ছে।

২০২৫ সালের ২২ ডিসেম্বর নিগাতা প্রদেশের পরিষদ, গভর্নর হিদেয়ো হানাজুমি-র প্রতি আস্থা ভোট প্রদান করে। এই ভোট কার্যত কাশিওয়াজাকি–কারিওয়া কেন্দ্রের আংশিক পুনরারম্ভের রাজনৈতিক অনুমোদন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এই বিশাল পারমাণবিক স্থাপনার অন্তত একটি চুল্লি শিগগিরই চালু হতে পারে।

২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকুশিমা দাই-ইচি কেন্দ্রে ঘটে যাওয়া ত্রিমুখী গলন জাপানের পারমাণবিক নীতিকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছিল। তখন একের পর এক ৫৪টি পারমাণবিক চুল্লি বন্ধ করে দেওয়া হয়। জনগণের আস্থা ভেঙে পড়ে, এবং পারমাণবিক শক্তি কার্যত নিষিদ্ধ বিষয় হয়ে ওঠে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে বাস্তবতা বদলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ, কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার এবং ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানির বোঝা জাপানকে আবারও পারমাণবিক শক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি এই পুনরারম্ভ নীতির প্রবল সমর্থক। ইতিমধ্যে কার্যক্ষম ৩৩টি পারমাণবিক কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি পুনরায় চালু হয়েছে।

কাশিওয়াজাকি–কারিওয়া কেন্দ্রের গুরুত্ব এখানেই শেষ নয়। এটি পরিচালনা করছে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) – যে সংস্থার নাম ফুকুশিমা দুর্ঘটনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, আগামী ২০শে জানুয়ারি এই কেন্দ্রের সাতটি চুল্লির মধ্যে প্রথমটি চালু করার কথা ভাবছে টেপকো। শুধু একটি চুল্লিই টোকিও অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় ২ শতাংশ বাড়াতে পারে।

তবে এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত নয়। বরং এই নিয়ে স্থানীয় সমাজে তীব্র বিভাজন স্পষ্ট। ভোটের দিন প্রায় ৩০০ জন বিক্ষোভকারী “পরমাণু যন্ত্র চাই না”, “কাশিওয়াজাকি–কারিওয়া পুনরারম্ভের বিরোধিতা করি” এবং “ফুকুশিমার পাশে আছি” লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন। ফুকুশিমা থেকে বাস্তুচ্যুত কৃষক ও পরমাণু-বিরোধী কর্মী আয়াকো ওগা বলেন, পারমাণবিক দুর্ঘটনার বিভীষিকা তারা নিজেরা ভোগ করেছেন, তা কখনোই হালকাভাবে নেওয়া যায় না। আজও তিনি সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন।

 

অন্যদিকে সরকার বলছে, জ্বালানি নিরাপত্তা ছাড়া ভবিষ্যৎ নেই। জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষা এবং অর্থনৈতিক চাপ কমানোর জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি। শুধু গত বছরই জাপানকে ১০.৭ ট্রিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলার) খরচ করতে হয়েছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা আমদানিতে – যা দেশটির মোট আমদানির এক-দশমাংশ। এই আর্থিক ও পরিবেশগত চাপে দাঁড়িয়েই জাপান আবার হাঁটছে এক বিতর্কিত, কিন্তু অনিবার্য -পারমাণবিক শক্তির পথে।

 

সূত্র: Japan set to restart world’s biggest nuclear power plant by Lyndal Rowlands and News Agencies, 22nd December 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − seventeen =