
নগরায়নের ফলে ইডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশাবাহিত জিকা ভাইরাস মারফত ডেঙ্গি আর চিকুনগুনিয়া রোগ ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে দেশে দেশে। অথচ এই জিকা ভাইরাস সম্বন্ধে খুব কমই আমাদের জানা আছে। সম্প্রতি ‘কমিউনিকেশন বায়োলজি’ পত্রে এ বিষয়ে লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন-এর বিজ্ঞানীদের এক গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জিকা ভাইরাস মানুষের ত্বকে বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটায়। যার ফলে ত্বক কার্যত এমন এক চুম্বকে পরিণত হয় যা মশাদের আকর্ষণ করে। কী করে তারা এ কাণ্ডটা ঘটায়? কোষের মধ্যে যে-প্রক্রিয়ায় জিন উত্তেজিত হয়ে উঠে আর এন এ এবং প্রোটিন তৈরি করে, সেই প্রক্রিয়াটাকে বদলে দেয় তারা। ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্ট কোশের জিন আর প্রোটিন ক্রিয়া যায় বদলে। ফাইব্রোব্লাস্ট কোশের কাজ হল দেহের সংযোগরক্ষাকারী কলার (কানেকটিভ টিশুর) কোশগুলোর মাঝের পরিসরে যে-উপাদান থাকে তার মধ্যে ফাইবারের ক্ষরণ ঘটিয়ে ত্বকের কাঠামোগত অখণ্ডতা অটুট রাখা। কিন্তু জিকা ভাইরাসের ক্রিয়ায় ত্বকের বিপকীয় পরিবর্তন ঘটলে ত্বক থেকে নির্গত কিছু কিছু রাসায়নিকের উৎপাদন বেড়ে যায়। এগুলোকে বলা হয় উদ্বায়ী জৈব যৌগ। এগুলো মশাদের আকৃষ্ট করে এবং কামড়ানোর প্ররোচনা জোগায়। বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল মেটা-প্রোটিওম বিশ্লেষণ পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়েছে। এতে জীবদেহে বিভিন্ন ধরণের জিন আর প্রোটিনের সার্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করা হয়। গবেষক দলের উপ-প্রধান ড. নৌশিক এমামি বলেছেন, তাঁদের পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, জিকা ভাইরাস যে নিষ্ক্রিয়ভাবে ছড়ায় তা নয়, তারা নিজেদের জীবনধারণ সুনিশ্চিত করবার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজে লাগায় মানুষের দেহের জৈব প্রক্রিয়াগুলোকে। জিকার প্রকোপ যত বাড়ছে, ইডিস মশার কর্মক্ষেত্রও ততই প্রসারিত হচ্ছে। তাই কী করে তারা তাদের প্রসারণের হার বাড়িয়ে চলেছে সেই প্রক্রিয়াটা বুঝতে পারলে, পশুদেহ থেকে মশার কামড় মারফত মানুষের দেহে সংক্রামিত ভাইরাসদের মোকাবিলার একটা পথ হয়তো বেরোবে। এমন হতে পারে যে ত্বক থেকে বেরোনো যেসব সংকেত মশাদের অতিপ্রিয়, হয়তো কোনো জিন-ঘটিত প্রক্রিয়ায় সেসব সংকেতকে ব্যাহত করা যাবে। খুবই জটিল সে-প্রক্রিয়া, সন্দেহ নেই; কিন্তু সমস্যাটাও খুব প্রবল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেশির ভাগ জিকা ভাইরাস নিজেরা কিন্তু খুব মারাত্মক রোগজনক নয়। যদি-বা রোগ ঘটায়, সে অতি সাধারণ, ২-৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। গর্ভবতী মহিলাদের বেলায় অবশ্য কখনো কখনো তারা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, ভ্রূণের ক্ষতিও করে। তাদের আসল ক্ষতিকারক ভূমিকাটা হল এই যে তারা আমাদের ত্বককে মশাদের দংশন ক্ষেত্রে পরিণত করে। সুইডেন, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় তাই যৌথভাবে জিকা ভাইরাস নিয়ে চর্চা করছেন।
সূত্র: Liverpool School of Tropical Medicine. “Zika uses human skin as ‘mosquito magnet’ to spread virus further.” ScienceDaily. ScienceDaily, 30 January 2025.
http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250130140504.htm>.