জীবনের আদি উপাদানের ইঙ্গিত

জীবনের আদি উপাদানের ইঙ্গিত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুলাই, ২০২৫

ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের বিস্ফোরণকে জীবনের বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওই যুগে প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন বছর আগে আধুনিক জীবের বেশিরভাগ শারীরিক কাঠামোর প্রথম উদ্ভব ঘটে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এর মূল উপাদানসমূহ আরও অনেক আগেই বিকাশ লাভ করেছিল, সম্ভবত ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ শুরুর ১০ মিলিয়ন বছর আগে।

ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনার ওলমো মিগেজ সালাস এবং লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জেকুন ওয়াং প্রাচীন জীবাশ্মের পরিবর্তে জীবনের ক্রিয়াকলাপের ছাপ যেমন– চলার দাগ, সুড়ঙ্গ বা অন্য কোনো ছাপ বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইডিয়াকারান ও ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের সন্ধিক্ষণে প্রাচীন প্রাণীদের শারীরিক গঠন এবং আচরণ বোঝা। এ প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন বছর আগের ঘটনা।

সাধারণত কঠিন অংশবিশিষ্ট জীবের জীবাশ্মই বেশি পাওয়া যায়, কারণ এগুলো সহজে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু জীবাশ্মর রেশ (ট্রেস ফসিল) নরম দেহের প্রাণীর অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়, যারা সচরাচর হাড় বা খোলস রেখে যায় না। গবেষকদের মতে, এই ধরনের ছাপ প্রাচীন পরিবেশ ও প্রাণীদের আচরণ বুঝতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৫৪৫ মিলিয়ন বছর আগেই সরু, লম্বা শরীরের প্রাণী সমুদ্রে সক্রিয় ছিল। তাদের শরীরে সম্ভবত পেশি, সামনের-পিছনের অক্ষ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ছিল। সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলার সক্ষমতা ছিল এবং তারা পরিবেশের প্রতি সাড়া দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করত। এইসব বৈশিষ্ট্যকে আধুনিক দ্বিপার্শ্বীয় প্রাণীদের পূর্বসূরি বলে ধরা হচ্ছে।
বিশেষভাবে, গবেষকরা আধুনিক প্রাণীদের পদচিহ্নের আকার ও দৈর্ঘ্যের সঙ্গে তুলনা করে প্রাচীন প্রাণীদের দৈহিক মাপ ও চলাচলের গতি নির্ধারণে গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই গবেষণা ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের সময়সীমা ও বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রচলিত ধ্যানধারণা বদলে দিচ্ছে এবং বোঝাচ্ছে, জীবন ও বিবর্তনের ধারা আসলে ধাপে ধাপে, অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল।

এ গবেষণা আরও ইঙ্গিত দেয় যে, ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের কোনো গতিপূর্ণ মুহূর্ত ছিল না। এটি বহু মিলিয়ন বছর দীর্ঘ একটি বিকাশকাল, যার মধ্যে জীবজগত নানা পরীক্ষামূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। সমুদ্রের তলদেশে সুড়ঙ্গ খোঁড়া এবং মাটির ওলটানোর মতো কাজ নতুন খাদ্য সংগ্রহের কৌশল এবং শারীরিক গঠনের উন্নয়নের পথ খুলে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 5 =