জোনাকির নানা কথা

জোনাকির নানা কথা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ আগষ্ট, ২০২৩

রাতে আমরা গাছে, ঝোপে ঝাড়ে জোনাকি পোকা জ্বলতে দেখি। জোনাকির পেটের বিশেষ অঙ্গে লুসিফেরিন নামে এক রাসায়নিক তৈরি হয়। এটা লুসিফেরেস এনজাইম, অক্সিজেন এবং সেলুলার কাজের জন্য জ্বালানী, ATP একত্রিত করে জোনাকির আলো তৈরি করে। কীটতত্ত্ববিদরা মনে করেন জোনাকি তাদের আলোক উৎপাদনকারী অঙ্গে কতটা অক্সিজেন যায় তা নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের আলোর ঝলকানি নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ধারণা জোনাকি সম্ভবত প্রাথমিকভাবে শিকারীদের তাড়ানোর উপায় হিসাবে আলোকিত করার ক্ষমতা বিকশিত করেছিল, কিন্তু এখন তারা বেশিরভাগ সময়ে সঙ্গী খুঁজে পেতে এই ক্ষমতা ব্যবহার করে। মজার ব্যাপার হল, সব জোনাকি আলো তৈরি করে না; এমন বেশ কিছু প্রজাতি আছে যারা দিনে উড়ে বেড়ায় এবং একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ফেরোমোনের গন্ধের উপর নির্ভর করে।
প্রতিটি জোনাকি প্রজাতির নিজস্ব সিগন্যালিং সিস্টেম রয়েছে। উত্তর আমেরিকার জোনাকি প্রজাতির পুরুষরা তাদের প্রজাতির জন্য নির্দিষ্ট উচ্চতায়, নির্দিষ্ট আবাসস্থলে রাতের সঠিক সময়ে উড়ে বেড়ায় এবং মেয়ে সঙ্গীর উদ্দেশ্যে আলোর ঝলকানি দিয়ে সংকেত পাঠায়। মেয়ে জোনাকি মাটিতে বা গাছপালায় বসে পুরুষের দিকে লক্ষ রাখে। একটা মেয়ে জোনাকি যখন তার পছন্দসই সংকেত পায় , তখন সেও পুরুষ জোনাকির উদ্দেশ্যে সংকেত পাঠায়।
অনেক জোনাকি লুসিবুফ্যাগিন নামের এক রাসায়নিক দিয়ে শিকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে। এই রাসায়নিকের অনু জোনাকি তাদের খাদ্যের অন্যান্য রাসায়নিক থেকে সংশ্লেষিত করে। লুসিবুফাগিন রাসায়নিকভাবে ব্যাঙের ত্বকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থের অনুরূপ, আর এটা এত অস্বস্তিকর যে ব্যাং, পাখি এই জোনাকি পোকা দেখলে খায় না। তাই অন্যান্য কিছু কীটপতঙ্গ জোনাকির আদলে নিজেদের দেখতে তৈরি করার চেষ্টা করে যাতে পাখি তাদের শিকার না করে।
ফোটুরিস প্রজাতির জোনাকির দেহে লুসিবুফ্যাগিন তৈরি হয় না। এই প্রজাতির মেয়ে জোনাকি ডিম রক্ষা করার জন্য ফোটিনাস প্রজাতির পুরুষকে মিলনের জন্য সংকেত পাঠায়। ফোটিনাস পুরুষ জোনাকি সেই সংকেতের ফাঁদে পা দিয়ে ফোটুরিস প্রজাতির মেয়ে জোনাকির কাছে গেলেই, ফোটুরিস প্রজাতির বড়ো লম্বা পায়ের মেয়ে জোনাকি তাদের ধরে খেয়ে নেয়। তারপর সেই পুরুষ জোনাকি হজম করে তাদের থেকে নিজের শরীরের সিলোমিক তরলে লুসিবুফ্যাগিন মিশিয়ে দেয়। এরপর কোনো প্রাণী এই মেয়ে জোনাকি বা তার ডিম আক্রমণ করতে এলেই, সে লুসিবুফ্যাগিন নির্গত করে নিজেদের রক্ষা করে। প্রায় ১৭০ ধরনের জোনাকির খোঁজ পাওয়া গেছে, কীটতত্ত্ববিদদের ধারণা আরো বেশ কিছু প্রজাতি থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =