জোর করে হাঁচি বন্ধ করা কী উচিত?

জোর করে হাঁচি বন্ধ করা কী উচিত?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

আমরা কম বেশি সবাই হাঁচি আর আমাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এটি আলাদা আলাদা। সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে হাঁচি আমাদের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবর্ত ক্রিয়া যা আমাদের নাকের ভিতর থেকে যেকোনো ধরনের বহিরাগত অবাঞ্ছিত পদার্থ অপসারণ করে। হাঁচির সময়ে শ্বাসনালীতে সৃষ্ট চাপ ব্যায়ামের সময় ভারী শ্বাস নেওয়ার চেয়েও ৩০ গুণ বেশি। একটি হাঁচির গতি প্রতি সেকেন্ডে ৫ মিটার থেকে ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি হতে পারে। কখনও কখনও আমরা নিজেদের নাক চেপে ধরে বা মুখ চেপে ধরে হাঁচি বন্ধ করে থাকি। তবে হাঁচির বেগের কথা মাথায় রেখে হাঁচি শুরু হওয়ার পরে এটি জোর করে বন্ধ করার প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যকর নয় বলে মনে করা হয়।
যখন আমাদের নাকের সংবেদনশীল স্নায়ু যে কোনো অ্যালার্জেন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এমনকি কোনো তরলের সংস্পর্শে আসে এবং উদ্দীপিত হয় তখন আমরা সাধারণত হাঁচি। আমাদের সংবেদনশীল স্নায়ু তখন এই তথ্য মস্তিষ্কে নিয়ে যায়। যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, তখন হাঁচির সূত্রপাত হয়। হাঁচার সময় প্রথমে আমরা গভীরভাবে শ্বাস নিই ফলত শ্বাসনালীতে একটা চাপের সৃষ্টি হয়। এর পরে ডায়াফ্রাম এবং পাঁজরের পেশী সংকুচিত হয়, আমাদের চোখ বন্ধ হয়ে যায় এবং একটি শক্তিশালী শ্বাস নির্গত হয়। হাঁচি নির্গত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের জিহ্বা আমাদের মুখ গহ্বরের ওপরের তালুতে গিয়ে লাগে। ফলে মুখের পিছন দিকটা বন্ধ হয়ে যায় তাই বেশিরভাগ বায়ুই আমাদের নাকের মাধ্যমে বাইরে নির্গত হয়। নাক দিয়ে নির্গত বাতাস অবাঞ্ছিত পদার্থগুলোকে বের করে দেয়।
হাঁচির সময় আমরা মুখ বা নাক বন্ধ করলে শ্বাসনালীতে চাপ স্বাভাবিক হাঁচির চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেড়ে যায়। হাঁচি জোর করে বন্ধ করলে আমাদের শরীর এই চাপকে অন্যত্র প্রেরণ করার চেষ্টা করে ফলে আমাদের চোখ, কান বা রক্তনালীর ক্ষতি হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্রেন অ্যানিউরিজম, গলা কেটে যাওয়া এবং ফুসফুসের ক্ষতিও হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই অ্যালার্জির চিকিৎসা বা বাইরের অবাঞ্ছিত পদার্থ নাকের ভিতরে যাতে না ঢোকে সেই প্রচেষ্টাই করা শ্রেয়। তাই হাঁচি বন্ধ না করে হাঁচিকে মেনে নিয়ে রুমালে বা টিস্যুতে হাঁচতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =