চুল পড়ে যাওয়া এ যাবৎকালে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই একটি বড় সমস্যা। তবে এবার পুরুষদের টাকের সমস্যা দূরীকরণে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানসূত্র নিয়ে হাজির হলেন গবেষকরা। মাইক্রোনিডল প্যাচের মাধ্যমেই টাক পড়ার সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন পুরষরা। আপাতত পুরুষদের জন্যই গবেষণাটি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় ঠিক কী বলা হচ্ছে? চুল গজানোর একাধিক উপায় রয়েছে। তবে এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অন্য সব উপায়ের তুলনায় ইঁদুরের দেহে আরও দ্রুততার সঙ্গে চুল গজাতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এই অসাধ্যসাধনের জন্য বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিতে হয়েছে মাইক্রোনিডল প্যাচের। বিশেষ এই প্যাচে রয়েছে ন্যানো পার্টিকল, যা চুল পড়ার মূল দুই অপরাধীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে – অনুপযুক্ত সঞ্চালন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
বৈজ্ঞানিক ভাষায় চুল পড়ার সবথেকে বড় কারণটিকে বলা হয় অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়া, যেখানে মাথার ত্বকের কোষগুলি মারা যায় এবং নতুন চুল গজাতেও অক্ষম হয়। এটি মূলত চুলের ফলিকলের চারপাশে রক্তনালীগুলির অভাবের কারণে ঘটে থাকে। রক্তনালী ব্যাপক ভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে ফলিকলগুলি চুলের প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। এটি মাথার ত্বকে প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেনের সঞ্চয়ের অভাবের সৃষ্টি করে। আর তার ফলে কোষগুলি বেশি দিন বেঁচেও থাকতে পারে না।
এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন গ্লাইকোল-লিপিড যৌগের মধ্যে সেরিয়াম ন্যানো পার্টিকেল লেপ দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁরা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (এমনই একটি অ্যাসিড যা প্রাকৃতিক ভাবে মানুষের ত্বকে পাওয়া যায়) ব্যবহার করে একটি দ্রবীভূত মাইক্রোনিডেল প্যাচ তৈরি করেছেন। আরও একটি ছাঁচ তৈরি করার জন্য পরে সেই যৌগটিতে ন্যানো পার্টিকেল যোগ করেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণা ঠিক পথে এগোচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে হেয়ার রিমুভার ক্রিম ব্যবহার করে ইঁদুরের উপর টাকের দাগ তৈরি করেছিলেন। তার পরে সেই টাকের স্পট বা দাগের উপরে আরও একটি প্যাচ অ্যাপ্লাই করেন বিজ্ঞানীরা। নতুন রক্তনালী গঠনকে উদ্দীপিত করার জন্যই কন্ট্রোল প্যাচের পাশাপাশিই এই বিশেষ প্যাচটি ব্যবহার করেন।
গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, ইঁদুরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্যাচগুলির তুলনায় বিশেষ ভাবে তৈরি করা প্যাচে একটি তীব্র পরিবর্তন রয়েছে। ইঁদুরটি চুলের দ্রুত পরিবর্তনের একাধিক লক্ষণও দেখিয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ত্বকের রঙ্গককরণের মতো লক্ষণগুলির সঙ্গেই উচ্চ মাত্রার কিছু যৌগ যা নতুন চুলের বৃদ্ধি নির্দেশ করে। খুঁটিয়ে লক্ষ্য করার মতো বিষয়টি হল, স্পেশালাইজড যে প্যাচ তৈরি করা হয়েছিল, তাতে ইঁদুরের চুল দ্রুত গজানো গিয়েছে যা অন্যান্য টপিকাল ট্রিটমেন্টের থেকেও দ্রুত।
ইঁদুরের উপরে এই পরীক্ষা সফল হলেও মানুষের উপরে পরীক্ষাটি সফল হয় কি না, তা দেখতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। তবে মানুষের উপরে এই পরীক্ষাটি সফল হলে তা অবশ্যই পুরুষদের টাক চিরতরে দূর করতে সক্ষম হবে এবং সারা বিশ্বের কাছেই এটি একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপায় হবে।