টেরোসর স্থলভূমিতে চলাফেরা করতে বিশাল আকার ধারণ করেছিল

টেরোসর স্থলভূমিতে চলাফেরা করতে বিশাল আকার ধারণ করেছিল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

টেরোসর, উড়ন্ত সরীসৃপের একটি বিলুপ্ত প্রজাতি। এরা মেসোজোয়িক সময়কালে পৃথিবীতে দাপিয়ে বেরিয়েছিল। টেরোসর প্রাচীনতম মেরুদণ্ডী প্রাণী যারা উড়তে পারত। এই প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওবায়োলজি অ্যান্ড বায়োস্ফিয়ার ইভোলিউশন কেন্দ্রের প্যালিওন্টোলজিস্টরা। তারা প্রথম চিহ্নিত করেছেন কিছু বিবর্তনীয় অভিযোজন যা এই প্রাচীন টেরোসরদের বিশাল আকারে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। আবিষ্কারটি একটি অবাক করা তথ্য প্রকাশ করেছে। অধ্যয়নে জানা গেছে এই বড়ো উড়ন্ত প্রাণীটি আকারে কতটা বড়ো হতে পারে তা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তাদের মাটিতে ভালোভাবে হাঁটার দক্ষতা। গবেষকরা সারা বিশ্বের টেরোসরদের সমগ্র বিবর্তনীয় ইতিহাসে তাদের হাত ও পা পরীক্ষা করেছেন। গবেষকরা এই প্রাণীদের মধ্যে এক বিস্ময়কর বৈচিত্র্য আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কার অনুসারে টেরোসরদের গতিবিধি শুধু আকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং তারা স্থলজ জীবনধারায় অভ্যস্ত ছিল। প্রথম দিকে তারা গাছে চড়তে পারত কিন্তু পরবর্তীকালে তারা আরও স্থল-ভিত্তিক জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। গবেষকদের ধারণা আদিম টেরোসরদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল যার সাহায্যে তারা সহজেই গাছে চড়তে পারত। তাদের হাতের ও পায়ের চামড়া বর্তমান যুগের টিকটিকিদের মতো ছিল। তবে দীর্ঘ সময় ধরে আঙুলের ডগার সাহায্যে উল্লম্ব পৃষ্ঠে আঁকড়ে থাকা বেশ কঠিন কাজ। এই বৈশিষ্ট্য ছোটো, হালকা ওজনের প্রাণীদের জন্য সহজ। গবেষকরা জানান আদিম টেরোসররা সম্ভবত গাছেই থাকত। তাই তাদের শরীরের আকার হয়তো ছোটো ছিল। কিন্তু মধ্য জুরাসিক যুগে একটি বড়ো বিবর্তনীয় পরিবর্তন ঘটে। টেরোসরের হাত ও পা ভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীদের মতো পরিবর্তিত হয়ে ওঠে। তাদের এই অভিযোজনের ফলে মাটিতে চলাফেরার জন্য তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। তাদের দেহ বিশাল আকারের হয়ে যায়। কিছু কিছু টেরোসরের ডানা প্রায় ১০ মিটার অবধি বিস্তৃত হতে পারে। আদিম টেরোসরদের পায়ের চামড়া সংযুক্ত থাকায় তাদের হাঁটা এবং দৌড়াতে অসুবিধা হত। পরবর্তীকালে, আরও উন্নত টেরোসরদের মধ্যে, এই ঝিল্লিটি মধ্যরেখা বরাবর আলাদা হয়ে যায়, যার ফলে তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তারা মাটিতে চলাফেরার জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। তাদের গেছো জীবনযাত্রা ছেড়ে টেরোসররা যখন মাটিতে নেমে আসে তার আগে থেকেই ডাইনোসর এবং অন্যান্য অনেক সরীসৃপ সহ বহু প্রাণীরা স্থলভাগে বসবাস করত। কিন্তু খুব চতুর এই টেরোসর অন্যান্য প্রাণীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়িয়ে যায়। তারা খাবার খোঁজার জন্য তাদের ওড়া ও হাঁটার ক্ষমতা দুইই কাজে লাগায়। এর ফলে তাদের মধ্যে কিছু অদ্ভুত খাবার খাওয়ার বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। যেমন শত শত সূক্ষ্ম, সূচের মতো দাঁত গঠিত হয় যা ছেঁকে খাবার খেতে ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ফ্ল্যামিঙ্গোদের মধ্যে খাবার খাওয়ার এই পদ্ধতি দেখা যায়। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যটি প্রথম ফ্ল্যামিঙ্গো বিবর্তিত হওয়ার অন্তত ১২০ মিলিয়ন বছর আগে দেখা গিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + eight =