অনেকসময় সময়ের অভাবে আমরা সকাল সকাল বাজারে যেতে পারিনা। তার বদলে আমরা সুপারমার্কেটের দোকান থেকে প্যাকেটের আনাজপাতি কিনে আনি। এখন প্রশ্ন হল দীর্ঘ দিন ঠান্ডায় জমিয়ে রাখা এই আনাজ কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? টাটকা ফল শাকসবজি আমরা প্রায়শই সবচেয়ে পুষ্টিকর ভেবে থাকি। কিন্তু এটাই একমাত্র সত্য নয়। খেত থেকে সরাসরি রান্নাঘরে ঢুকতে বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করার সময় খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিগুণ হ্রাস পেতে পারে। ঠান্ডায় জমিয়ে রাখা শাকসবজিতে কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন সি এবং ই বেশি থাকতে পারে কারণ সেগুলো খেত থেকে খুব তাড়াতাড়ি হিমায়িত করা হয়। পরিবহন এবং স্টোরেজের তারতম্য এই পণ্যকে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে। খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম তাজা ফল বা সবজির মতোই ঠান্ডায় জমিয়ে রাখা আনাজে একই মাত্রায় থাকে। অন্যদিকে হিমায়িত শাকসবজি এবং ফলের আরেকটি সুবিধা হল এর মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় কমানো সম্ভাবনা, কারণ আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী এই ফল বা আনাজ ব্যবহার করতে পারি।
সম্প্রতি আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের গবেষকরা ঠান্ডায় জমিয়ে রাখা আনাজের গুণাগুণ নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে খেত থেকে সংগ্রহ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি ফল বা শাকসবজি ঠান্ডায় রেখে দেওয়া যায়, তা হলে তার বেশির ভাগ পুষ্টিগুণই বজায় থাকে। সেগুলি নষ্ট হয় না। কিন্তু যদি এই সব আনাজ সংগ্রহ করার দীর্ঘ দিন পরে আমরা সেগুলো সংরক্ষণের জন্য ঠান্ডায় রাখি তবে তার পুষ্টিগুণ অনেক কমে যেতে পারে। এই হিমায়িত ফল বা সবজি একেবারে পেকে যাওয়ার পরই এদের হিমায়িত করা হয়। ফলে এই আনাজে ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ পরিপূর্ণ থাকে কারণ আমরা জানি ফল বা শাক সবজি খেত থেকে তুলে নেওয়ার পরই ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদানের উত্পাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফল বা সবজি খেত থেকে তোলার পর প্রথমে ধোয়া হয় ও পরে প্রথমে ফুটন্ত জল ও পরে বরফ ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করার পর প্যাকেজ করে ফ্রিজ করা হয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই পুরো পদ্ধতি সেরে ফেলা হয়। ফলে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। এছাড়াও আমরা জানি মরসুমি ফল বা সবজির ফলন নির্দিষ্ট সময়ে সবচেয়ে ভালো হয়। যেমন কোনো ফল বা সবজি গ্রীষ্মকালে ভালো ফলে, আবার কিছু শীতকালে ফলে। ফ্রোজেন ফল বা সবজি বেশিরভাগ সময় উপযুক্ত মরসুমে তুলেই ফ্রিজ করা হয়। বরং, মরসুমের অন্য সময় তাজা সবজি বা ফলে সেই গুণ থাকে না, কারণ, সেগুলো কৃত্রিম উপায়ে ফলানো হয়। সুতরাং, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ফ্রোজেন ফলমূল বা শাকসবজি খেতে বাধা নেই।