ডলফিনরা মজা করার সময় একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসে

ডলফিনরা মজা করার সময় একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ অক্টোবর, ২০২৪
ডলফিন

কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন ডলফিনরা যে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে, তাদের এই অভিব্যক্তি সংক্রামক। ডলফিনের স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা মুখ নিয়ে মানুষ নানা ব্যাখ্যা দেয়। ইউরোপের গবেষকরা প্রমাণ দিয়েছেন, ক্যাপটিভ বটলনোজ ডলফিন (Tursiops truncatus) তাদের মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করে। ইটালির ইউনিভার্সিটি অফ পিসার ইভোলিউশানারি বায়োলজিস্ট পালাগি জানিয়েছেন, এদের খোলা মুখের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি থাকে। খেলার সময়, যখন একটা ডলফিন অন্য ডলফিনের খোলা মুখ নকল করে, তখন খেলার সাথীরা বন্ধুত্বপূর্ণ মিথস্ক্রিয়াতে সম্মত হয়। গবেষকদের ধারণা সঠিক হলে, ‘হাসি মুখ’ হল কৌতুকপূর্ণ অভিব্যক্তি যার গভীর শিকড় স্তন্যপায়ী জীববিজ্ঞানে স্থলজ ও সামুদ্রিক প্রাণীতে দেখা যায়।
সামাজিক মাংশাসী প্রাণীদের খোলা মুখ, বাঁদরের দুষ্টুমি করার সময় অভিব্যক্তি, মানুষের হাসি আদি ও অকৃত্রিম খেলা, অন্যকে সাহায্য করার অভিব্যক্তি। মানুষের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে তা শুধুমাত্র মজা পাওয়ার অভিব্যক্তি। আগে প্রমাণ পাওয়া গেছে, প্রাইমেট, ঘোড়া, বন্য ও পোষা কুকুর খেলার সময় শিথিল, খোলা মুখের অভিব্যক্তি দেখায়। তবে সামুদ্রিক প্রাণীতে এটা প্রথমবার দেখা গেছে।
পালাগি আর তার সাথীরা ২২ টা ক্যাপটিভ ডলফিনের চারটে সামাজিক দলে নিজেদের মধ্যে খেলার ৮০ ঘণ্টার ফুটেজ দেখেছেন। একমাত্র একটা ডলফিন একা খেলার সময় মুখ খোলা রেখেছিল। বাকি ডলফিনরা নিজেদের মধ্যে খেলার সময় যেমন ধাওয়া করা, মজা করে মারামারি করার সময় এভাবে মুখ খুলে রেখেছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, এটা কখনও আক্রমণাত্মক আচরণ ছিল না। কারণ কেউ কাউকে জখম করেনি, এক এক করে তারা একে অন্যকে ধাওয়া করে, পালিয়ে, খেলাচ্ছলে কামড় দিয়ে, নাক দিয়ে ধাক্কা মেরে খেলা করছিল। কেউ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অন্যকে কামড়ায়নি। আর একজন মুখ খোলার পর তার খেলার সাথীও ওভাবে মুখ খুলছিল। আর যখন ডলফিনদের আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেছে, তখন কোনো ডলফিনকে মুখ খোলা অবস্থায় দেখা যায়নি।
পালাগি ব্যাখ্যা করেন, খোলা মুখের অঙ্গভঙ্গি সম্ভবত কামড়ের ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছে, কামড়ে না দিয়ে মজা করে ‘কামড় দিতে পারি’ ডলফিনরা এটাই দেখায়। এই ধরন কিছু মাংসাশী প্রাণী যেমন মীরক্যাট সান বিয়ারে দেখা যায়। অভিযোজনের দৃষ্টিকোণ থেকে, যখন ডলফিন শিকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ সতর্ক থাকেনা, তখন শাব্দিক যোগাযোগ থেকে চোখের মাধ্যমে যোগাযোগে চলে যাওয়া তাদের সামাজিক খেলার কার্যকর কৌশল হতে পারে। এই গবেষণা আইসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।