
জৈব-ভূ-রসায়নের এক গবেষণায় জানা গেছে, ১৫ কোটি বছর আগের ডাইনোসরদের খাদ্যাভ্যাস তাদের দাঁতের এনামেল স্তরে আজও রয়ে গেছে। এনামেল হলো দাঁতের বাহিরের শক্ত আবরণ, যা দাঁতকে ঘষা-বামড়া থেকে রক্ষা করে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের জুরাসিক যুগের পাঁচ ধরনের ডাইনোসরের দাঁতের এনামেল থেকে ক্যালসিয়ামের আইসোটোপ বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, কীভাবে বড় বড় তৃণভোজী ডাইনোসররা একই পরিবেশে বিনা প্রতিযোগিতায় একসাথে বাস করত তার কারণ খুঁজে বের করা।
দাঁতের এনামেল দীর্ঘ সময় রাসায়নিক উপাদান ধরে রাখতে পারে। বিভিন্ন উদ্ভিদে ক্যালসিয়ামের আইসোটোপ অনুপাত ভিন্ন হওয়ায়, ডাইনোসরের দাঁতের এনামেলে তার ছাপ পড়ে। এই তথ্য থেকে তারা বুঝতে পেরেছেন ডাইনোসররা কী ধরনের উদ্ভিদ খেতো। যেমন তৃণভোজী ক্যামারাসরাস ডাইনোসর কাঠজাত গাছের অংশ বেশি খেতো, কিন্তু ক্যাম্পটোসরাস নরম পাতার প্রতি আগ্রহী ছিল, আর ডিপ্লোডোকাস নীচের স্তরের উদ্ভিদ খেতো। মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে অ্যালোসোরাস ছিল তৃণভোজী শিকারী , আর ইউট্রেটাউরানোসুখুস মাছ খেতো। উটা থেকে পাওয়া দাঁতের জীবাশ্মগুলো দীর্ঘ সময় খরার মাঝে জমা হয়ে সংরক্ষিত হয়েছে। গবেষকরা প্রতিটি দাঁত থেকে ছোট ছোট অংশ নিয়ে তার ক্যালসিয়াম আইসোটোপ বিশ্লেষণ করেছেন। আগে ধারণা ছিল, তৃণভোজী ডাইনোসররা গাছের উচ্চতা অনুযায়ী খাদ্য ভাগ করতো, কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে তারা গাছের অংশ অনুযায়ী খাদ্য নির্ধারণ করতো। ঘাড়ের গঠন ও দাঁতের আকারেও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিল রয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘ ঘাড়ের ডাইনোসররা ঘাড় নড়াচড়ার ক্ষমতার সুবাদে খাদ্য সংগ্রহে সুবিধা পেত। এই গবেষণা শুধু ডাইনোসরের খাদ্যের রহস্য নয়, জুরাসিক যুগের উদ্ভিদজীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের এক নতুন মডেল উপস্থাপন করেছে। গবেষক লিয়াম নরিস বলেন, “এই বিশ্লেষণ প্রমাণ করে, জুরাসিক বাস্তুতন্ত্র ছিল জটিল, পরস্পর যুক্ত ও বিবর্তনের দিক থেকে সমৃদ্ধ”।
সূত্র : Calcium isotopes reveal niche partitioning within the dinosaur fauna of the Carnegie Quarry, Morrison Formation” ( 1st October 2025)