ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় আন্ত্রিক জীবাণু

ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় আন্ত্রিক জীবাণু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কানাডার একদল গবেষক রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং লিভারকে সুরক্ষিত রাখার এক অপ্রত্যাশিত উপায় খুঁজে পেয়েছেন। ‘সেল মেটাবলিজম’ জার্নালে প্রকাশিত এই আবিষ্কার টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও ফ্যাটি লিভার প্রভৃতি বিপাকজনিত রোগের নতুন চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে। ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি, উনিভের্সিতে লাভাল এবং ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার গবেষকরা কাজটি করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, অন্ত্রের জীবাণু থেকে উৎপন্ন একটি অণু রক্তপ্রবাহে ঢুকে লিভারকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ও চর্বি তৈরি করতে প্ররোচিত করে। গবেষক দলটির উদ্ভাবিত একটি অভিনব পদ্ধতি এই অণুকে রক্তে প্রবেশের আগেই অন্ত্রে আটকে দেয়। ফলস্বরূপ, মোটা ইঁদুরের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং ফ্যাটি লিভারের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক জনাথন শার্টজার বলেন, “এটি বিপাকীয় প্রক্রিয়ার এক নতুন দিক। আমরা প্রায় একশ বছর ধরে জানি যে পেশি ও লিভারের মধ্যে ল্যাকটেট ও গ্লুকোজ বিনিময়ের একটি চক্র রয়েছে, যার নাম কোরি চক্র। এখন আমরা দেখলাম, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও এই চক্রে যুক্ত।” ১৯৪৭ সালে কার্ল ফার্ডিনান্ড কোরি ও গার্টি থেরেসা কোরি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন পেশি থেকে উৎপন্ন এল -ল্যাকটেট কিভাবে লিভারকে ব্যবহার করে গ্লুকোজ তৈরি করে, আর তা আবার পেশিকে শক্তি জোগায়- এই চক্র আবিষ্কারের জন্য। এই জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই আজও শরীরের শক্তি বিপাককে অনুধাবন করা হয়। কানাডীয় দলটি এবার দেখাল, মোটা ইঁদুর ও ভারী চেহারার মানুষের রক্তে ডি -ল্যাকটেট নামে আরেক ধরনের অণুর মাত্রা বেড়ে যায়। এল -ল্যাকটেট মূলত উৎপন্ন করে পেশি। আর ডি -ল্যাকটেটের প্রধান উৎস হলো অন্ত্রের জীবাণু। এই অণুই রক্তে শর্করা ও লিভারের চর্বি বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে। এই প্রভাব আটকাতে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন ‘গাট সাবস্ট্রেট ট্র্যাপ’ নামে এক ধরনের নিরাপদ, জৈব-বিয়োজ্য পলিমার। এটি অন্ত্রে ডি -ল্যাকটেটের সাথে যুক্ত হয়ে তাকে শোষিত হতে বাধা দেয়। এই ট্র্যাপ -খাওয়ানো ইঁদুরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে। ফলে খাদ্যাভ্যাসে বা ওজনে পরিবর্তন ছাড়াই লিভারের প্রদাহ ও ফাইব্রোসিস কমে যায়। শার্টজার বলেন, “এটি বিপাঘটিত রোগ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। হরমোন বা লিভারকে সরাসরি নিশানা না করে আমরা ক্ষতিকর জীবাণু জ্বালানিকে আগেভাগেই আটকে দিচ্ছি।” এই গবেষণা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভারসহ নানা বিপাক ঘটিত রোগ নিয়ন্ত্রণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এখন মানুষের ওপর এই পদ্ধতি কতটা নিরাপদ ও কার্যকর তা যাচাইয়ের জন্য আরও গবেষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

সূত্র: “Gut substrate trap of D-lactate from microbiota improves blood glucose and fatty liver disease in obese mice” 29 July 2025, Cell Metabolism.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − eight =