ডারউইনের ১৮৫৯ সালের দ্বিধাটির সমাধান

ডারউইনের ১৮৫৯ সালের দ্বিধাটির সমাধান

Posted on ৯ এপ্রিল, ২০১৯

‘ডারউইনের সংশয়’ নামে খ্যাত একটি ধাঁধার নিষ্পত্তি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি করতে সমর্থ হয়েছেন। দ্য জিওলজিক্যাল সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন গবেষণাপত্রে এমনই দাবী করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীমহল।

১৮৫৯ সালে দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বইতে ডারউইন লিখেছিলেন, “ক্যাম্ব্রিয়ান মহাযুগের আগের এই…যুগপর্বগুলির সমৃদ্ধ জীবাশ্মের সম্ভার কেন খুঁজে পাওয়া গেল না, এ প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনো উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়” – ডারউইনের এই দ্বিধাই বিখ্যাত একটি গোলকধাঁধা। প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব যদি সঠিক হয়ে থাকে, প্রাণ ধীরপায়ে বিবর্তিত হয়েছে মিলিয়ন বৎসর ধরে। ৫৪২ মিলিয়ন বছর পূর্বে আরম্ভ হওয়া ক্যাম্ব্রিয়ান যুগপর্বে আকস্মিক প্রজাতি বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।

ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের আগের কোনও জীবাশ্ম ডারউইন খুঁজে পাননি, জীবাশ্ম-বিশেষজ্ঞদের গভীরভাবে রহস্যে ঢেকে রেখেছে এই তথ্য। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সায়েন্সের অধ্যাপকদ্বয়, রিচার্ড এইচ.টি. বালো ও মার্টিন ডি. ব্রাস্যির শ্রোপশায়রে স্থিত পাথরের একটি গঠনের উপর জোর দিয়েছেন, লংমিন্ডিয়ান সুপারগ্রুপ নামেই যা পরিচিত। ডারউইনের সময়েও ভূতত্ত্ববিদ জে.ডব্লিউ সাল্টার এই একই পাথর নিয়ে পরীক্ষায় মনে করেছিলেন, প্রিক্যাম্ব্রিয়ান যুগের জীবাশ্ম হয়তো সেখানে থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু, ট্রেস ফসিল ছাড়া কোনকিছুই তিনি শনাক্ত করতে পারেননি ( ট্রেস ফসিলস – জীবকর্তৃক পরিত্যক্ত কিছু অনিয়মিত চিহ্ন ) ।

লংমিন্ডিয়ান সুপারগ্রুপ থেকে সংগৃহীত নতুন নমুনা ছাড়াও সাল্টারের ব্যক্তিগত সংগ্রহও গবেষকরা ব্যবহার করেছেন। অভাবনীয়ভাবে সংরক্ষিত আণুবীক্ষণিক কিছু জীবাশ্ম তাঁরা চিনতে পেরেছেন। ক্যাম্ব্রিয়ান পর্বে মিশতে থাকা ইডিয়াক্রান যুগপর্যায়ের ব্যাপ্তিময় অণুজীবের সম্ভার পাওয়া গেছে এই জীবাশ্মদের অনুসন্ধানে। বিভিন্ন উপায়ে তারা সংরক্ষিত থেকেছে – পলিস্তরের নীচে চাপের প্রভাবে পাথরের উপর কার্বন-অবশেষের এক পালতা আস্তরণ তৈরি করে; কিছু ত্রিমাত্রিকে সুরক্ষিত হয়েছে অথবা খনিজচরিত্র বিকশিত হয়ে কঠিনতর জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ছাপ হিসেবেই থেকে গেছে কিছু নমুনা, অধঃক্ষেপের বিভিন্ন স্তরে নতুনভাবে গঠিত হয়েছে, ভূতলে তীক্ষ্ণ অভিক্ষেপ তৈরি করেছে তারা।

এখনও স্পষ্ট নয় কীভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছিল এই অণুজীবের গোষ্ঠী। অগভীর সামুদ্রিকপরিবেশে তারা টিকে থেকেছে, সূর্যালোক থেকে অথবা কোনো জৈব যৌগ বিশ্লেষণে শক্তি উৎপাদন করে। তারা হয়তো শৈবাল, ছত্রাক বা বৈচিত্র্যময় ফিলামেন্টাস ব্যাক্টিরিয়ার সাথে বিবর্তনের সূত্রে সম্পর্কিত।

ডারউইন নিজেও বেশ দৃঢ়বিশ্বাসী ছিলেন প্রিক্যাম্ব্রিয়ান যুগের এই জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া নিয়ে। ‘হয়তো পৃথিবীতে যখন কিলবিল করবে জীবন্ত প্রাণের কোলাহলে’ – এমনই দূরদর্শী ছিলেন ডারউইন। ডারউইনের এই ধাঁধার সমাধানে লংমিন্ডিয়ান সুপারগ্রুপ থেকে পাওয়া জীবাশ্ম যে বিশেষ সাহায্য করবে, তা ডারউইনের সময় থেকেই জানা ছিল। তবে বর্তমানে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নমুনাকে আরও নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়েছে, ফলে এই পাথরে জমে থাকা ঐতিহাসিক রহস্যগুলির যবনিকা পতন হয়তো সম্ভব হবে।