
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, মাস খানেক হয়ে গেল। এরই মধ্যে তাঁর বিজ্ঞান-বিরোধী তুঘলকি অবস্থানের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন শধু আমেরিকার নন, সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। নেচার পত্রিকা ২৫ ফেব্রুয়ারির একটি ক্রুদ্ধ সম্পাদকীয়য় লিখেছেন, ট্রাম্প ‘এক অভূতপূর্ব আক্রমণ হেনেছেন বিজ্ঞানের ওপর, গবেষণার প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা আর উদ্যোগগুলির ওপর’। রাষ্ট্রপতি পদে বসার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহায়তা খাতে বরাদ্দ শত শত কোটি ডলার বাতিল করে দিয়েছেন। যৌনতা, লিঙ্গপরিচয়, জাতি-পরিচয় (রেস), অক্ষমতা এবং কিছু বিশেষ সহায়তা-বাচক শব্দের ব্যবহার থাকলে সেইসব বিষয়ে অধ্যয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। গবেষণা খাতে তহবিল ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে, কবে এবং আদৌ সেগুলি পুনরায় চালু হবে কিনা, কেউ জানে না। সবচেয়ে বড়ো ক্ষতিটা তিনি করেছেন মার্কিন গবেষণা সংস্থাগুলির। একটা ব্যাপার স্পষ্ট। নিরপেক্ষ, বিজ্ঞান-ভিত্তিক সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে খাটো করতে, এমনকী লোপাট করে ফেলতে বদ্ধপরিকর এই প্রশাসন। আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, মানুষের নিরাপত্তা আর সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত খাতগুলির ওপরেই আঘাত আসছে বেশি। যেসব জাতীয় সংস্থা গবেষকদের নিয়োগ করে, গবেষণার ওপর নির্ভর করে, সেইসব সংস্থার কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন, এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট্স অব হেলথ-এর মতো পৃথিবী-প্রসিদ্ধ সংস্থাগুলিও রেহাই পায়নি। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট্স অব হেলথ-এর নতুন গবেষণা-অনুদান প্যানেল “সাময়িকভাবে” ঝুলে রয়েছে। সর্বসাধারণের ব্যবহার্য গ্রন্থাগার আর সংগ্রহশালাগুলির ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্যোগে উন্নয়নমূলক কাজগুলি থেকে আমেরিকার নাম কেটে দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমেত। জলবায়ু-পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোয় টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তথাকথিত “লিঙ্গ মতাদর্শ ও চরমপন্থা”র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নামে তাঁর প্রশাসন যৌনতা আর লিঙ্গপরিচয়ের জটিলতা সংক্রান্ত নীতি এবং অনুদান বাতিল করে দিয়েছেন। নেচার পত্রিকা এর প্রতিবাদে বিশ্ব জুড়ে কতকগুলি প্রতিবাদের পন্থার কথা বলছেন। এক, প্রকাশ্যে এইসব ব্যবস্থার নিন্দা করা। দুই, আমেরিকার গবেষকরা যাতে চাকরি হারানোর ভয় থেকে মুক্ত হয়ে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন, সেই দাবিকে সমর্থন করা। তিন, একথা বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ফেডেরাল সরকারের অধীনে যাঁরা কর্মরত তাঁদের পক্ষে প্রকাশ্যে সব কথা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু সরাসরি আমেরিকার ফেডেরাল সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে কর্মরত বিজ্ঞানী ও গবেষকরা যেন সরকারি সংস্থার বিপন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষকদের পাশে এসে দাঁড়ান। চার, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলির বিজ্ঞানীদেরও উচিত এ বিষয়ে প্রতিবাদে সরব হওয়া। নেচার পত্রিকা সখেদে বলেছেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রর বর্তমান প্রশাসন যেন বহু বছর ধরে অর্জিত নিজেদের বিরাট বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের মূলে কুঠারাঘাত করতে উদ্যত। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের উচিত ট্রাম্প প্রশাসনের এই বিজ্ঞান-বিরোধী পশ্চাদ্মুখী ব্যবস্থাদির প্রতিবাদ করা। কেননা বিজ্ঞান একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প। তার কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে আঘাত লাগলে সে আঘাত সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।