
দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলের সমুদ্রের উপরে অবস্থিত রোববার্গ গুহা থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় কুড়ি হাজার বছর আগের প্রাচীন মানুষের তৈরি, হাজার হাজার পাথরের হাতিয়ার আবিষ্কার করেছেন। নামিবিয়া এবং লেসোথোতে পাওয়া হাতিয়ারগুলির শৈলীর সাথে এগুলির বেশ মিল রয়েছে। সবটা দেখে অনুমান করা হচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ের মানুষেরা ব্যাপক সংযোগ বজায় রাখতে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। জার্নাল অফ প্যালিওলিথিক আর্কিওলজিতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। আদি মানব সম্প্রদায়ের উৎপাদন কৌশল, প্রাগৈতিহাসিক গতিবিধি এবং তারা কীভাবে একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতো, কীভাবে নিজেদের জ্ঞান ভাগ করে নিত- তা দেখাই এই গবেষণার উপজীব্য। ২৪,০০০ থেকে ১২,০০০ বছর আগে যখন এই সরঞ্জাম গুলি তৈরি করা হয় , তখন পৃথিবী মহাতুষার যুগের শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে। সেই সময়, পৃথিবীর বেশিরভাগ জল হিমবাহে আটকে পড়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তর নেমে গিয়েছিল। ফলত, দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল রেখা আজকের চেয়ে অনেক মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। ” এই গুহাগুলি জলের ঠিক ধারে নয় বরং বিশাল খোলা সমভূমির কাছাকাছি ছিল। তখন হরিণ এবং শিকারী প্রাণী দুই থাকতো। মানুষও এই প্রাণীগুলিকে শিকার করত এবং শিকারের জন্যই তাদের প্রয়োজন ছিল নতুন সরঞ্জাম এবং অস্ত্রের”, প্রধান গবেষক ওয়াটসন বলেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা যাকে ‘রববার্গ টেকনোকমপ্লেক্স’ বলছেন তা একটি পাথুরে সৈকতের উপরে অবস্থিত- খাড়া পাহাড়ের একেবারে মুখে । ওয়াটসন জানান, “সমুদ্র তীর থেকে গুহায় ঊর্ধ্বে ৭৫ ফুট উঁচুতে উঠতে হয়। আমাদের কাছে সুরক্ষা দড়ি এবং বালির বস্তা দিয়ে তৈরি কিছু সিঁড়ি ছিল। খননের জন্য আমাদের গুহার ভিতরে ঢুকতে হয়েছিল”। “যেহেতু এগুলো অত্যন্ত পুরনো স্থান- শেষ তুষার যুগের প্রায় শেষের দিকের, তাই খননের সময় আমাদের খুবই সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়েছে। আমরা ছোট ছোট দাঁত বসানো সরঞ্জাম এবং ট্রুয়েল ব্যবহার করেছি যা পলির প্রতিটি ছোট স্তরকে সরাতে সাহায্য করে”। প্রাচীন ধুলো এবং মাটির নিচে চাপা থাকা হাজার হাজার পাথরের হাতিয়ার খুঁজে পেয়েছেন ওয়াটসন এবং তার দল। যার মধ্যে ছোট ধারালো ফলক, বৃহত্তর পাথরের টুকরো পাওয়া গেছে। বড়ো পাথরের টুকরোগুলি থেকেই ফলক কাটা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। ওয়াটসন আরো জানান, “সাধারণ মানুষ পাথরের হাতিয়ার সম্পর্কে যখন চিন্তা করে, তখন স্বভাবতই তাদের মনে হয়, বিচ্ছিন্ন টুকরো, পাত এবং ফ্লেক্স-এর উপরে নজর দেওয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়, তারা তাদের হাতিয়ার তৈরির জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং ক্রিয়াকলাপের একটা ক্রম অনুসরণ করে। এই প্রযুক্তিগুলির অনেক কিছুই খুব নির্দিষ্ট ছিল – যেন আপনাকে শেখানো হয়েছে ! সেইখানেই এই সামাজিক তথ্য লুকিয়ে রয়েছে। আমরা যদি একজন প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে দেখি তাহলে বুঝতে পারব যে সেই সময় আদি মানুষেরা একে অপরের সাথে তাদের ধারণা ভাগ করে নিত।” উদহারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এই রোববার্গ গুহায় ওয়াটসন ক্ষুদ্র ফলকের অংশ ভাঙার যে বিশেষ পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন, তা নামিবিয়া এবং লেসোথো সহ কয়েকশো মাইল দূরেও পাওয়া গেছে। এই পদ্ধতি এবং প্রণালীগুলির যেভাবে পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে তা ইঙ্গিত দেয় যে এটি নিছক আকস্মিক মিল নয় বরং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এই গবেষণাটি রোববার্গ গুহার মতন হাজার হাজার বছর পুরনো গুহাগুলি যারা ব্যবহার করত,সেই আদিম মানুষ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ করে। প্রজাতি হিসেবে, আমাদের একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। তার সাথে এটাও বলে রাখা ভালো, “শেষ তুষার যুগের আশেপাশে বসবাসকারী মানুষদের সাথে আজকের মানুষের অনেক মিল রয়েছে”।