ত্বকের জৌলুস বাড়াবে মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া

ত্বকের জৌলুস বাড়াবে মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ত্বকের জৌলুস বাড়াবে

আমরা নানা প্রসাধনী লাগাই নিজেদের ত্বকের জৌলুস বাড়াতে। মুখের ত্বক টানটান রাখতে, বলিরেখা রোধ করতে ক্রিম ময়েশ্চারাইজার এসব ব্যবহার করে থাকি। এগুলো তৈরিতে নানা রাসায়নিক ছাড়াও প্রাকৃতিক দ্রব্য, ভেষজ দ্রব্য ব্যহার হয়। এছাড়া প্রাণীজাত নানা দ্রব্য ব্যবহারও প্রসাধনী শিল্পের বেশ সাধারণ ঘটনা। শামুক মিউসিন বা শামুক স্লাইম প্রসাধনী শিল্পে এর ময়শ্চারাইজিং এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। শামুক ছাড়াও আরও নানা অদ্ভুত উপাদান প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির ওমেগা-তে গবেষকরা মুখে লাগানোর প্রসাধনীর জন্য মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি অণুর কথা বলেছেন। পরীক্ষাগারে এই ব্যাকটেরিয়ার কোশ তৈরি করে দেখা গেছে, এদের উপাদানের ত্বক উজ্জ্বল করার ও অ্যান্টি-রিঙ্কেল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চামড়ায় বলিরেখা রোধ করতে পারে। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার এরকম অদ্ভুত জিনিস থেকে আগেও হয়েছে। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লক্ষ করেন স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার একটা পেট্রি ডিশে এক ধরনের ছত্রাক গজিয়েছে, যা এই ব্যাকটেরিয়াকে বাড়তে বাধা দিচ্ছে। এর থেকে তিনি যুগান্তকারী অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন।
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে রেড সিব্রীম এবং ব্ল্যাকহেড সিব্রীম মাছের অন্ত্রের জীবাণু থেকে এই দুটো নতুন যৌগের উত্স পাওয়া গেছে। এই জীবাণুগুলো ১৯৯২ এবং ২০১৬ সালে প্রথম শনাক্ত করা গিয়েছিল, তবে এগুলো কোন ধরনের যৌগ তৈরি করে তার ওপর আগে কোনো গবেষণা করা হয়নি। হায়ো-জং লি আর চুং সাব কিম দেখেন, এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর এমন বিপাকীয় যৌগ তৈরি করে যা প্রসাধনী শিল্পে কাজে লাগতে পারে। গবেষকরা রেড সিব্রীম এবং ব্ল্যাকহেড সিব্রীমের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি ২২টা অণু শনাক্ত করেছেন। তারা পরীক্ষাগারে তৈরি ইঁদুরের কোশে টাইরোসিনেজ এবং কোলাজেনেস এনজাইমগুলো বাধা দেয় এরকম প্রতিটা যৌগ মূল্যায়ন করেন। টাইরোসিনেজ মেলানিন উৎপাদনে জড়িত, এর থেকে বার্ধক্যজনিত ত্বকে অতিরিক্ত রঞ্জক তৈরি হয়। অপরদিকে কোলাজেনেস, স্ট্রাকচারাল প্রোটিন কোলাজেন ভেঙ্গে ফেলে, যার ফলে ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টি হয়। রেড সিব্রীম মাছের অন্ত্রের তিনটে ব্যাকটেরিয়া এই দু ধরনের এনজাইমকে বাধা দেয়। এতে কোশের কোনো ক্ষতি হয় না। এই গবেষণা থেকে তারা মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রসাধনী শিল্পে সম্ভাব্য প্রয়োগ খুঁজে পেয়েছেন।