ত্বকের নিরাময়ে ‘লিভিং বায়োইলেক্ট্রনিক্স’-এর ব্যবহার

ত্বকের নিরাময়ে ‘লিভিং বায়োইলেক্ট্রনিক্স’-এর ব্যবহার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জুন, ২০২৪

সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা বলছে প্রফেসর বোঝি তিয়ান তার পরীক্ষাগারে অনমনীয়, ধাতব, ভারী ইলেকট্রনিক্সের জগতকে নরম, নমনীয় শরীরের কোশ ও কলার জগতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। গবেষকরা এমন এক প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন যার নাম দেওয়া হয়েছে “লিভিং বায়োইলেক্ট্রনিক্স”- জীবন্ত কোশ, জেল এবং ইলেকট্রনিক্সের সংমিশ্রণে এমন এক প্রটোটাইপ তৈরি হয়েছে যা জীবন্ত কলার সাথে সমন্বিত হতে পারে। সেই টুকরোটি গবেষকরা তৈরি করেছেন সেন্সর, ব্যাকটেরিয়া কোশ এবং স্টার্চ ও জেলটিন থেকে তৈরি একটি জেল দিয়ে। ইঁদুরের উপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে যে যন্ত্রটি সোরিয়াসিসের লক্ষণকে ক্রমাগত নজরদারির মধ্যে রাখতে পারে এবং নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। গবেষকরা আশা করেন যে একই নিয়ম শরীরের অন্যান্য অংশে যেমন হার্ট ব স্নায়ু তন্ত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
রক্ত মাংসের শরীরের সাথে ইলেকট্রনিক্সের সমন্বয় সবসময়ই বেশ কঠিন কাজ ছিল। যদিও পেসমেকারের মতো যন্ত্র অগণিত জীবনকে উন্নত করেছে, তবে তাদের ব্যবহারের বেশ কিছু অসুবিধেও রয়েছে কারণ ইলেকট্রনিক্স সর্বদা ভারী এবং অনমনীয় এবং অনেক ক্ষেত্রে জ্বালাভাব সৃষ্টি করতে পারে। এই গবেষণায় গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেন কীভাবে জীবন্ত কোশ এবং কলা কৃত্রিম পদার্থের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। এর পিছনে থাকা মৌলিক নীতিগুলো তারা অন্বেষণের চেষ্টা করেন। তারা একটি নতুন পদ্ধতির সাহায্য নেন। সাধারণত, বায়োইলেক্ট্রনিক্সের মধ্যে যেমন ইলেকট্রনিক্স থাকে, তেমনই থাকে একটি নরম স্তর যা শরীরে জ্বালাভাব রোধ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে গবেষকরা একটি তৃতীয় উপাদানকে সমন্বিত করেন- একটি জীবন্ত কোশ। গবেষকের দল দেখেন যে ব্যাকটেরিয়া- এস. এপিডার্মাইডিস, প্রাকৃতিকভাবে মানুষের ত্বকে বাস করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গবেষকরা তিনটি উপাদান দিয়ে একটি যন্ত্র বা ডিভাইস তৈরি করেছে। সেন্সর সহ একটি পাতলা, নমনীয় ইলেকট্রনিক সার্কিট যা ট্যাপিওকা স্টার্চ এবং জেলটিন দিয়ে তৈরি একটি জেল দিয়ে আচ্ছাদিত। এই জেলটি খুবই নরম এবং কলার অনুকরণে তৈরি এবং এর মধ্যে এস. এপিডার্মিডিস জীবাণুকে আটকে দেওয়া হয়েছে। যখন ডিভাইসটি ইঁদুরের ত্বকে স্থাপন করা হয়, তখন ব্যাকটেরিয়া যৌগ নিঃসরণ করে যা প্রদাহ কমায় এবং সেন্সরটি ত্বকের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নির্ণয় করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সব ইঁদুরের মধ্যে সোরিয়াসিসের মতো লক্ষণ দেখা গেছে তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। গবেষকরা আশা রাখেন তাদের তৈরি এই সিস্টেম যার নামকরণ করা হয়েছে এবেল (ABLE) প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ অ্যাক্টিভ বায়োইনটিগ্রেটেড লিভিং ইলেকট্রনিক্স প্রায় দেড় বছর বা তার বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা আরও জানান চিকিত্সা সুবিধাজনক করতে, ডিভাইসটি সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজে শুকানো যেতে পারে এবং প্রয়োজনে সহজেই পুনরায় হাইড্রেট করা যেতে পারে। তাছাড়াও যেহেতু নিরাময় প্রভাব জীবাণু দ্বারা সরবরাহ করা হয়, ফলত এটি একটি জীবন্ত ওষুধের মতো কাজ করবে। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরও গবেষণার আশা রাখেন গবেষকরা।

 

ছবি ঋণ – Jiuyun Shi and Bozhi Tian